চৈত্রের বিদায়, বরণের অপেক্ষায় নতুন বছর
১৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চৈত্রের শেষ সূর্যাস্তের সঙ্গে বিদায় নিচ্ছে বাংলা বছর ১৪২৫ সন। এ উপলক্ষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দিকে দিকে আজ বিদায়ের বার্তা। সমবেত সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নগরীর ডিসি হিলে শুরু হয় বর্ষবিদায়ের মূল অনুষ্ঠান। বিদায়ের পাশাপাশি প্রতীক্ষা নতুন ভোরেরও। যে ভোরের নতুন সূর্যের আলো একরাশ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আসবে বাঙালির জীবনে। আসবে নতুন সকাল। নতুন বছরটিকে বরণের অপেক্ষায় উন্মুখ বাঙালি।
চট্টগ্রাম নগরীর ডিসি হিল প্রাঙ্গণ ও সিআরবির শিরিষতলায় বর্ষবিদায় ও বরণের মূল দুটি আসর বসে। এছাড়া বছরের শেষ সূর্যাস্ত অবলোকনে প্রতিবছর চৈত্র অবসানের শেষ বিকেলে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় নগরীর ডিসি হিলে বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠানমালা। ভায়োলিনিস্ট চট্টগ্রাম নামে একটি সংগঠন বেহালার সুর তোলে মুগ্ধ করে দর্শকদের।
নৃত্যে অংশ নেয় সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, ডান্স একাডেমি, নৃত্যম একাডেমি এবং ঐকতান সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে মোহরা আইডিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুসুম ললিতকলা একাডেমি, শান্তঞ্জলি সঙ্গীত নিকেতন ও অনুশীলন সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা।
তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল, শব্দনোঙ্গর আবৃত্তি সংগঠনের বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশনারও কথাও আছে ডিসি হিলের নজরুল মঞ্চে। এছাড়া একক গান ও আবৃত্তি পরিবেশনা চলছে।
রোববার ভোর ৬টায় একই মঞ্চে রাগসঙ্গীত, কবিতা ও গানে নববর্ষকে বরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক সংগঠন সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সংগঠক আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী।
এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে নগরীর সিআরবি শিরীষতলায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বিকেল সাড়ে চারটায় ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিষদের সভাপতি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এসময় সাংস্কৃতিক সংগঠক ও একুশ মেলা পরিষদের সভাপতি মফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এরপর সুরাঙ্গন সঙ্গীতালয়, নৃত্যরূপ একাডেমি, বঙ্গবন্ধু শিশুকিশোর মেলা, ওড়িষী ডান্স অ্যান্ড টেগোর মুভমেন্ট, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন দলীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি। ধারাবাহিক এই অনুষ্ঠান রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠক ও উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহসভাপতি ডা. চন্দন দাশ।
রোববার নববর্ষের দিন একই সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে সাহাবুদ্দিনের বলীখেলা।
ডিসি হিল, সিআরবি, অভয়মিত্র ঘাটসহ নগরীর যেসব বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বেশি, সেখানে চারস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
শনিবার বিকেলে নগরীর ডিসি হিলে উৎসব প্রাঙ্গন পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের আরও জানিয়েছেন, বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠানকে ঘিরে পাঁচ হাজার পুলিশ মোতায়েন আছে নগরীতে। থানা পুলিশ ও রিজার্ভ টিমের বাইরে সোয়াত টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও গোয়েন্দা ইউনিট নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এসময় নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মারুফ হাসান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা এবং কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দুপুরের পর থেকেই লোকসমাগম শুরু হয়। সন্ধ্যার আগেই হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়। বছরের শেষ সূর্যাস্ত অবলোকনে যাওয়া মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে সমুদ্র সৈকত এলাকা।
নগরীর পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ এসেছে সমুদ্র সৈকতে। আমরা তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করছে। নারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
এছাড়া কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নগরীর অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল টু এলাকায়ও হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বর্ষবিদায় ও বরণের আয়োজন করেছে। শনিবার বিকেল ৪টায় সম্মিলিত তবলা বাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই অনুষ্ঠান। এরপর বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। চট্টল ইয়ুথ কয়ার নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল মাঠে।
বছরের শেষদিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিনে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং নাড়ু-মোয়া বিক্রিরও ধুম লেগেছে। নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, হাজারি গলি, বকশিরহাট, চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সাধারণত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রোগমুক্তির আশায় সচরাচর মেলে না এমন সবজি দিয়ে পাচন রান্না করে চৈত্রের শেষদিনে। তবে এই সংস্কৃতি এখন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষেও পালিত হচ্ছে।
এর বাইরে নগরীর বকশিরহাটে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার বিভিন্ন রকমের নাড়ু, মোয়া বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে তিল, কুল, নারকেল, চাল, মড়ি ও খইয়ের নাড়ু।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই