ফেনীতে নুসরাতকে নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের মন্তব্যে তোলপাড়
১৩ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:০৭
ফেনী: মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে চাইলে অনুমতি না দিয়ে নুসরাততে নিয়ে কটূক্তি করেছেন ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম। আর এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। শনিবার (১৩ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ছাত্রী তাহমিনা রুমি ও স্নিগ্ধা জাহান রিতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শনিবার সকাল ৯টায় নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ব্যানারে আমরা একটা মানববন্ধন করতে কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের কাছে অনুমতির জন্য গিয়েছিলাম। আমরা কয়েকজন ম্যাডামের রুমে যাই। তারপর ম্যাডাম যা বললেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই।’
আরও লিখেছেন, ‘ম্যাডাম আমাদের বললেন নুসরাতকে তার স্যার বলেছিল পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেবে, তাই নুসরাত নিজ ইচ্ছায় স্যারের কাছে গিয়েছিল। অথচ এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছি কলেজের পিয়নকে দিয়ে নুসরাতকে ডাকা হয়েছে। তবে কী আমরা এতদিন ভুল জানতাম। আমাদের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে মিডিয়া। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয় আমার। কে দেবে এসব প্রশ্নের উওর। কোথায় পাব এসবের উওর। আমাদের ম্যাডাম আরও বলেছেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে ঘটছে, কারণ বর্তমান মেয়েরা অনেক লোভী। নুসরাত মেয়েটা ধোয়া তুলসী পাতা না। মেয়েটার সঙ্গে যেটা হয়েছে তার জন্য মেয়েটাই দায়ী। এটার জন্য মানববন্ধন করতে আমি কখনো অনুমতি দেব না। তোমরা ক্লাসে যাও।’
এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওইদিন ছাত্রী কম ছিলো তাই পরে মানববন্ধন করতে বলেছি।’
এর আগে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী। এ অভিযোগে মামুন বিল্লাহ নামের ওই শিক্ষার্থীকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দেয়। সেসময় ওই বিল্ডিংয়ের তিন তলায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে মুখোশপরা চার থেকে পাঁচ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
সারাবাংলা/এমআই