Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মঙ্গল কামনার যাত্রায় মানুষের ঢল


১৪ এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৫

১৪২৬ বঙ্গাব্দ। সমৃদ্ধি, সম্ভাবনা আর সচ্ছলতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে শুরু হলো আরও একটি নতুন বছর। দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের পুরাতন দিনকে পেছনে ফেলে শুরু হলো নতুন যাত্রা। শস্যের মাস বৈশাখের প্রথম দিনে তাই বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠল বাঙালি জাতি।

আরও পড়ুন- মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়

বাঙালির শ্রেষ্ঠ সার্বজনীন উৎসব বাংলা বর্ষবরণ আজ পালিত হচ্ছে সারাদেশে। দেশের প্রতিটি জনপদে আয়োজন করা হয়েছে ঐতিহ্যের উৎসব। তবে বর্ষবরণের এসব রঙিন আয়োজনে এগিয়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকা।

পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল বর্ষবরণের অন্যতম বড় আয়োজন। চারুকলার বকুলতলা থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রায় বর্ণমালা, বাঘ-ভাল্লুকসহ বিভিন্ন পাখির মুখোশ নিয়ে অংশ নেন হাজার হাজার বাঙালি। বাউল, ভাটিয়ালি ও রক সংগীতের সুরের মূর্চ্ছনার সঙ্গে ঢাকের তালে তালে রমনা উদ্যানের দ্বার ঘুরে এসে আবার চারুকলাতেই শেষ হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য’ গ্রন্থের ‘ত্রাণ’ কবিতা থেকে নেওয়া এই পঙক্তি প্রসঙ্গে চারুকলার অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষক নিসার হুসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই কবিতাটি মঙ্গলময় প্রার্থনার মতো শোনায় সবার কাছে। এখানে দুর্ভাগ্য, লোকভয়, রাজভয়, মৃত্যুভয় দূর করে মঙ্গল বার্তা নিয়ে আসার কথা বলেছেন কবিগুরু। এ জন্যই পঙক্তিটি মঙ্গল বার্তার শোভাযাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে।’

শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের গর্বের পরম্পরা এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি গোটা বাঙালি জাতির জন্যও সম্মানের। শুরু থেকেই আমি শোভাযাত্রায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। আজও খুব সকালে এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। দেশের মানুষের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক এবারের নববর্ষ— এটাই প্রার্থনা।’

বিজ্ঞাপন

১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বের হয়েছিল এই শোভাযাত্রা। যেখানে দেশের লোকশিল্পের নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে শুরু থেকেই স্থান পেতে থাকে নকশা আঁকা পাখা, ফুল, প্রজাপতি, প্রকৃতি ও বাহারি রঙের পাখির মুখোশ। ফলে ২০১৬ সালে ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ বছর বর্ণাঢ্য এই আয়োজন পা রাখল ৩০ বছরে।

বরাবরের মতোই চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরাই আয়োজন করে থাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ বছরের এই আয়োজনে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষেদের শিক্ষার্থী উর্মিলা। তিনি বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা যতটা সুন্দর ও গোছানোভাবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে, সেভাবে বোধহয় আর কোনো কিছুই পারে না। এখানে যারাই আসে, তারাই এই দেশকে উৎসবমুখর একটি জনপদ হিসেবে জানে। এটি দেশের ভাবমূর্তির জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার ভালো লাগছে যে এর সঙ্গে এবার আমি নিজেও যুক্ত রয়েছি।’

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে উত্তরা থেকে চারুকলা এসেছেন একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আনুশা মাহজাবিন। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক আচরণ কতটা বিস্তৃত, সেটা বৈশাখের এই উদযাপনে না এলে বোঝা যায় না। মঙ্গল শোভাযাত্রা সত্যিকার অর্থেই চমৎকার একটি আয়োজন। বৈশাখে ফসল তোলার যে আনন্দ, সেটা পাওয়া যায় এই আয়োজনে।’

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে অবশ্য কট্টর ধর্মপন্থী দলগুলো নিয়মিত আপত্তি জানিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের নানা রকমের হুমকিও দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, ‘এরা সবকিছুতেই আপত্তি তোলে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় আপত্তি থাকবে কেন? এটি আনন্দ আয়োজন। এখানে সবাই অংশগ্রহণ করে। এখানে কেন ধর্মনাশ হবে!’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সার্বজনীন উৎসবের এই আয়োজনে নিরাপত্তার যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থায়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুরো শোভাযাত্রাটি ঘিরে রেখেছিল বিশেষ সোয়াত বাহিনী। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাধারণ সদস্য ছাড়া ছিলেন সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

বঙ্গাব্দ ১৪২৬ বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর