ঝুঁকিপূর্ণ ১০৮ স্কুলভবন: খোলা আকাশের নিচে ক্লাস
২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:০৪
রিয়াদ ফেরদৌস,ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট
চাঁদপুর: চাঁদপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ১০৮ ভবনেই চলছে অর্ধ-লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে অধিকাংশ স্কুলে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। এতে যেমন পাঠদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি আতঙ্কে রয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যেকোনও মুহূর্তে দেয়াল ধসে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে চাঁদপুর সদরে ২৯টি, হাজীগঞ্জে ৪০, কচুয়ায় ১১, শাহরাস্তিতে ২৪ এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৪টিসহ মোট ১০৮টি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন রয়েছে।
উত্তর মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। এরপর ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তারপর থেকে বিদ্যালয়ের আর কোনও ভবন নির্মাণ হয়নি। এখন স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হওয়ার পরেও নিরুপায় হয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। তবে চাঁদপুরে এমন স্কুল একটি দুটি নয়, ১০৮টি স্কুল ভবনের প্রায় একই দশা।
আতঙ্কিত শিক্ষকরা জানান, কয়েক দফায় আবেদন করেও কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যে ভবনের নিচে স্কুল শিক্ষকরা আতঙ্কে থাকেন; সেখানে কোমলমতি শিশুদের ভয়ঙ্কর অবস্থা।
শিক্ষার্থীদের দাবি আতঙ্কে তারা স্কুলে আসতে ভয় পায়, মন বসে না পড়ায়। এ নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কে আছেন। তারাও আদরের সন্তানকে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের স্কুলগুলোতে রাখতে চান না। ইতোমধ্যে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।
উত্তর মৈশাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিদারুল আলম জানান, বারবার আবেদন করে কোনো কাজ হয়নি। কখনো কখনো খোলা মাঠে পাঠদান করি। কখনো বা বারান্দায় পড়ানো হয়। এভাবে কত দিন চলবে? এমন প্রশ্ন এ বিদ্যালয় প্রধানের।
কচুয়া উপজেলার ৯১ নম্বর রহিমানাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভবন নির্মাণের পর সংস্কার না করায় রুমগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অফিস কক্ষসহ ১৩টি রুম রয়েছে, এর মধ্যে চারটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭শ’ ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষের অভাবে বাইরে শিক্ষার্থীদেরও বিদ্যালয়ের মাঠে ক্লাস করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিভাবক সোনিয়া আক্তার বলেন, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় তিন-চার বছর থেকে বাচ্চারা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে বাচ্চারা বিরক্ত বোধ করে এবং অনেক সময় স্কুলে যেতে চায় না।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাকারিয়া বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ন কবির বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর সমাপনী পরীক্ষায় শত ভাগ পাসসহ ভালো ফলাফল করায় অনেক অভিভাবক স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থী বাড়লেও শ্রেণিকক্ষ নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে না। এর ফলে শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের শীতকালে স্কুলে মাঠে আবার বর্ষাকালে স্কুলের বারান্দায় ক্লাস করানো হচ্ছে। দ্রুত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা না হলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আরও সমস্যা হবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম জানান, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব গুরুত্ব বিবেচনা করে স্কুলের ভবনের কাজ করা হবে।
সারাবাংলা/টিএম/এনএস