শ্রমিক ধর্মঘটে অচল নৌপথে পণ্য পরিবহন, জাহাজে পণ্য ওঠানামাও বন্ধ
১৬ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ঘর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রেখেছেন লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকরা। কর্ণফুলী নদীতে অলস বসে আছে প্রায় দেড়শ লাইটারেজ জাহাজ। একইভাবে পণ্য নেওয়া ও খালাসের অপেক্ষায়ও বন্দরের বহির্নোঙ্গরে বসে আছে বেশকিছু মাদার ভ্যাসেল। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে স্বাভাবিক থাকলেও সার্বিকভাবে পণ্য পরিবহন ও উঠানামায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক লাইটারেজ জাহাজগুলোর কার্যক্রমে।
লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ সারাবাংলাকে জানান, ধর্মঘটের কারণে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট ও সংলগ্ন নদীতে প্রায় ১৫০ জাহাজ অলস বসে আছে। ৫০টি জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য বহির্নোঙ্গরে গেলেও সেখানে কাজ করছেন না শ্রমিকরা। এতে সেই জাহাজগুলোও সেখানে অলস সময় পার করছে।
‘ঘাট ও বর্হিনোঙ্গরে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কত পণ্য নিয়ে কতটি মাদার ভ্যাসেল বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করছে সেই হিসাব আমরা নিচ্ছি। তবে গতকাল (সোমবার, ১৫ এপ্রিল) রাত থেকে বহির্নোঙ্গর কিংবা দেশের অন্য কোনো নৌঘাটে পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো লাইটারেজ জাহাজের বুকিং হয়নি,’— বলেন মাহবুব রশীদ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দরের ভেতরে জেটিতে পণ্য খালাসে কোনো সমস্যা নেই। এখানে তো লাইটারেজ শ্রমিকদের কোনো কাজ নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে বর্হিনোঙ্গরে। সেখানে পণ্য উঠানামা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে তো মাদার ভ্যাসেলগুলোর ওপর ওয়েটিং চার্জ আরোপ হবে। এখন পর্যন্ত সমস্যা নেই। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর পরিস্থিতি অবনতির দিকে দিকে যাবে।’
চট্টগ্রাম ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মালিকপক্ষের কোনো সমস্যা নেই। আমরা তো জাহাজ চালানোর জন্য রেডি। কিন্তু শ্রমিকরা কাজ না করলে কিভাবে সম্ভব? ১২শ থেকে ১৫শ টন পণ্য নিয়ে আসা একটি মাদার ভ্যাসেলের একদিনের ডেমারেজ আসবে ১২ থেকে ১৪ হাজার ডলার। এই ধর্মঘটে আমাদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, মাদার ভ্যাসেলগুলোর এজেন্টরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’
শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে আছে— যাত্রীবাহী লঞ্চের কর্মীদের জন্য ২০১৬ সালের ঘোষিত বেতন কাঠামোর পূর্ণ বাস্তবায়ন, সব শ্রমিকদের ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা অথবা খাদ্যভাতা দেওয়া, কর্মস্থল কিংবা দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে শ্রমিকদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র দেওয়া, মাস্টার পরীক্ষার সনদ দেওয়া ও নবায়নে অনিয়ম বন্ধ, বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধ, নদীর নাব্যতা রক্ষা ও বয়া-বাতি স্থাপন।
ধর্মঘটের বিষয়ে চট্টগ্রামের ফেডারেশনের নেতারা কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর