ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বৈঠক কেন অবৈধ নয়?
১৬ এপ্রিল ২০১৯ ২১:২৮
ঢাকা: ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মীমাংসার নামে সালিশি বৈঠক কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে গৃহবধূ পলি আক্তারের (২২) আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া রিটের শুনানিকালে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) এই রিট আবেদনের শুনানি হয়।
স্থানীয় সরকার (এলজিআরডি) সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সুবর্ণচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, ‘নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই প্রায় ১৫ থেকে ১৬টি ধর্ষণের ঘটনা দেখতে পাই। এ ধরনের ঘটনারোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
এসময় রিটকারী আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান শুনানিতে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি ৬০ হাজার টাকায় মীমাংসা করে দেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরু। পরে ধর্ষক আলাউদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
আদালত তখন জানতে চান—ফৌজদারি মামলা হয়েছে কি? যিনি ইউপি সদস্য তাকে আসামি করা হয়েছে? এ ঘটনায় ধর্ষণের মামলা না হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা কেন হল?
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা গ্রাম আদালতে বিচারের সুযোগ নেই। ইউপি সদস্য বেআইনিভাবে এ কাজ করেছেন। আত্মহত্যার শিকার ওই নারীর বাবা থানায় মামলা করেছেন।’
এরপর আদালত বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় বাবা ধর্ষণের মামলা না করে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা কেন করল? তাকে কি ফোর্স করে এটা করানো হয়েছে? যেভাবে বলা হচ্ছে তাতে তো ধর্ষণের অভিযোগ আসে না। ওই গৃহবধূর স্বামী এখন কী বলে, তার বক্তব্য নেই কেন?’
‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের এই পরিণতি হতো না’
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার তখন বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে বাবা শোকার্ত। সে অবস্থাতেই তিনি মামলা করেছেন। তিনি আইন সম্পর্কে জানেনও না। তাছাড়া ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হলো বাদি। আর যদি এ ধরনের ঘটনায় মামলা ভুল ধারাতে হয়েও থাকে বা বিজ্ঞ আদালত যদি মনে করেন যে ধারায় পরিবর্তন আসা দরকার, তাহলে তা হতে পারে।’
আইনজীবী বাশার বলেন, ‘তদন্ত শেষে যখন চার্জশিট হবে তখন সেখানে ধারা পরিবর্তন করে নতুন ধারায় চার্জশিট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার আদালতে ধারা সংশোধনের আবেদন দিয়ে, নতুন ধারা সংশোধন বা সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে।’
এরপর আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমও