‘ওয়াসা ৯৮ শতাংশ দুর্নীতিমুক্ত, পানি শতভাগ সুপেয়’
২০ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:০৫
ঢাকা : ঢাকা ওয়াসায় কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি নেই। প্রতিষ্ঠানটি ৯৮ শতাংশ দুর্নীতিমুক্ত বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ ফুটিয়ে নয় সরাসরি ওয়াসার ট্যাপের পানি পান করেন। আর ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা ওয়াসার সার্বিক মান নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে তিনি এসব দাবি করেন। দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাকসিম এ খান ওই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখান করেন। তিনি বলেন, “ওয়াসার পানি নিম্নমানের হওয়ার কারণে ৯১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা পানি ফুটিয়ে পান করেন। আর সে কারণে ঢাকা মহানগরীতে বছরে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার গ্যাস পুড়ানো হয়”— টিআইবি’র দেওয়া এই তথ্য সঠিক নয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি নেই, ঢাকা ওয়াসায় এমন জায়গা খুঁজে পায়নি টিআইবি!
তাকসিম এ খান বলেন, গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক’ টিআইবির প্রকাশিত প্রতিবেদনটি একেবারেই গবেষণামূলক নয়, এটি একপেশে ও ধারণামূলক। তিনি দাবি করেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ ফুটিয়ে নয় সরাসরি ওয়াসার ট্যাপের পানি পান করেন। আর ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। আমরা ২৪৩টি জায়গা থেকে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি কোথায় কোনো ধরনের জীবাণু পাওয়া যায়নি।
তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকা শহরে কোথাও পানি সরবরাহে ঘাটতি নেই। ঢাকা ওয়াসার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করছে। ফলে পানির ঘাটতি সংক্রান্ত টিআইবির প্রতিবেদন সঠিক নয়।
ঢাকা ওয়াসার নানা ধরনের অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে টিঅইবির প্রতিবেদন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকা ওয়াসায় কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি নেই। প্রতিষ্ঠানটি ৯৮ শতাংশ দুর্নীতিমুক্ত।
‘ওয়াসার পানি সুপেয় না হওয়ায় বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে, এতে করে গ্রাহকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিত হচ্ছেন’— এই প্রসঙ্গে ওয়াসার এমডি বলেন, গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ ঢাকাসহ সারাদেশে গ্যাসের চুলার জন্য বিল নির্ধারিত আছে। ফলে অতিরিক্ত গ্যাস পোড়ানো হলেও বাড়তি বিল দিতে হয় না।
ওয়াসার এমডি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ঢাকা ওয়াসার প্রতি বছর রাজস্ব আয় ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রতিবছর আয় বাড়ার কারণে চলতি বছর আয় বেড়ে হয়েছে ৪শ’ কোটি টাকা। এছাড়াও সিস্টেম লস ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে নেমেছে। এতে করে এ বছর আরও ২শ’ কোটি টাকা আয় বেড়েছে।
উল্লেখ্য গত ১৭ এপিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) “ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক” এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় সেবাগ্রহীতাদের ৪৪.৮% চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। সেবাগ্রহীতাদের ৫১.৫% সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার এবং ৪১.৪% সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পানির নিম্নমানের হওয়ার কারণে ৯১.০% সেবাগ্রহীতা পানি ফুটিয়ে পান করায় ঢাকা মহানগরীর খানাসমূহে জ্বালানি ব্যয় হয় ৩৩২ কোটি টাকা।
টিআইবির ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার সার্বিকভাবে পানি ও পয়নিষ্কাশন সেবার নিম্নমানের কারণে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সেবাগ্রহীতার অসন্তুষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিকতর কার্যকর ও সেবাধর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে ১৩ দফা সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি।
সারাবাংলা/জিএস/জেডএফ