Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুই শিক্ষকের অগ্রায়ন, ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগের মিলনমেলা


২০ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:১২ | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ১২:০৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: ‘শিক্ষার্থীদের শেখাতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি, শিখছি। শেখাটা এখনো আমার অব্যাহত রয়েছে। আমি নিজেকে শিক্ষক হিসেবে মনে করি না, আজীবন ছাত্রই রয়ে গেছি’—বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিদায়ী শিক্ষক অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী।

শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষক অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী ও অধ্যাপক আখতার সুলতানার অবসর গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত ‘অগ্রায়ন’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘আমি খুব শিক্ষকসুলভ ছিলাম না। অনেকদিন বটতলায় ক্লাস নিয়েছি, মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদের সঙ্গে গল্প করেছি। সুতরাং আমি কখনোই শিক্ষকসুলভ ছিলাম না।’

ঢাবি সাংবাদিকতার দুই শিক্ষকের জন্য ‘অগ্রায়ন’

অনুষ্ঠানে বিদায়ী অধ্যাপক আখতার সুলতানা বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্র আমাদের একই গোল। সহায়তা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক দিয়ে এই গোল অর্জন করা যায়। কেউ আমাদের সম্মান করবে এটা নয়, সম্মান অর্জন করতে হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের ছেলে-মেয়ের মতো। আমাদের সবসময় তাদের পাশে থাকতে হবে। তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে, প্রয়োজনে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া জোর করে সম্মান আদায় করা যায় না। আজকে তিন দশক পূর্বে যাদের পড়িয়েছি, তারাও এখানে আসছে। এর চেয়ে বড় সম্পর্ক ও শ্রদ্ধাবোধ আর কী হতে পারে। এই বিভাগ চাইলেও আমি চলে যাবো না, আমি আছি সব সময় তোমাদের পাশে।’

সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন ড. কাবেরী গায়েন বলেন, “এ বিভাগে সাধারণত ‘বিদায়’ কথাটি ব্যবহার করি না। এক্ষেত্রে আমরা ‘অগ্রায়ন’ শব্দটি ব্যবহার করি। আজ আমাদের দুজন অত্যন্ত সম্মানিত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের অগ্রায়ন উপলক্ষে সম্মাননা জানাচ্ছি। তারা ৩৫ বছর ধরে তারা আমাদের পড়িয়েছেন, আমাদের দেখার চোখকে সৃষ্টি করেছেন।”

কাবেরী গায়েন আরও বলেন, ‘আখতার সুলতানা সব সময় বলতেন, শিক্ষকতা কোনো খণ্ডকালীন বিষয় না। এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। এর মাধ্যমে তিনি শুধু এই বিভাগের বর্তমান, সাবেক ও অনাহুত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অমোঘ বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। আহাদুজ্জামান স্যার আমাদের ‘ক্রিটিক্যাল স্কুল’সহ অনেক কিছু শিখিয়েছেন যা আমি এখনো মেনে চলি। স্যার ও ম্যাম সারাজীবন যে শিক্ষা দিয়েছেন তা আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।’ এ সময় তিনি এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও  সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘অবসরগ্রহণ মানে হলো খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়া। এতদিন ধরে চলতে থাকা অনুশাসন থেকে মুক্ত হওয়া। যেহেতু আখতার সুলতানা ও আহাদুজ্জামান খাঁচা থেকে মুক্ত হচ্ছেন। এখন যেহেতু তারা আর খাঁচায় বন্দি নেই, তাদের এখন দেশকে আরও বেশি কিছু দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “আহাদ স্যার সম্পর্কে বলতে গেলে স্বামী বিবেকান্দের একটি কথা মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘বিধাতা আকাশ থেকেও আসেন না বা মাটি ফুঁড়েও আসেন না। ঈশ্বর মানুষের মাঝেই বিরাজ করে।’ আহাদ স্যারও এমন একজন মানুষ। আমি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে তিনি আমাদের সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বলেছিলেন। যা এখন আমরা বুঝতে পারি। তিনি একজন সুন্দর মানুষ, সুন্দর মনের মানুষ।”

এছাড়া তিনি বলেন, ‘আখতার সুলতানা ম্যাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন শিক্ষক যিনি কোনো ধরনের শিক্ষক রাজনীতি না করে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি আমাদের মায়ের মতই স্নেহ করতে। আমি তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। দুই শিক্ষককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কাবেরী গায়েন। তাদের একগুচ্ছ বেলীফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিভাগের প্রভাষক তাহমিনা হক দিনা ও মো. আসাদুজ্জামান কাজল। প্রীতি উপহার দেন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ ও ড. গীতিআরা নাসরীন। সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান ও কাবেরী গায়েন। অনুষ্ঠানে ২৩টি প্রবন্ধ ও আহাদুজ্জামান মো. আলী ও আখতার সুলতানার দুটি সাক্ষাৎকার সমৃদ্ধ ‘অগ্রায়ন জার্নাল’ উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানসহ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস।

সারাবাংলা/কেকে/এমআই

অগ্রায়ণ অধ্যাপক আখতার সুলতানা অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মো. আলী ঢাবি সাংবাদিকতা