Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শবে বরাতের রাতে ৬ ছাত্র হত্যা, বিচার শেষ হয়নি ৮ বছরেও


২১ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৫৬

ঢাকা: আট বছর আগে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিন বাজারে ছয় কলেজ ছাত্রকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। এ ঘটনার আট বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি এ মামলার বিচার কাজ।

শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিন বাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলারচরে ঘুরতে যায় সাত বন্ধু। ওই সময় ডাকাত সাজিয়ে তাদের ছয় জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় তাদের মধ্যে থাকা একজন অল্পের জন্য বেঁচে যায়। ওই ঘটনায় গ্রামবাসীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। তবে আট বছরের শেষ হয়নি বিচার কাজ।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বিচারক কামরুন্নাহার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলাটিতে ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল দিন নির্ধারিত আছে।

নিহত ছয় ছাত্র হলেন, ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব ও বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান। তাদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

একই বছরে ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতিও দেওয়া হয়।

মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরবর্তীকালে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়।

হত্যা মামলার মোট আসামি ৬০ জন। তাদের মধ্যে নয় জন পলাতক, একজন মারা গেছেন আর বাকি ৫০ জন জামিনে আছে। এদের মধ্যে ওয়াসিম নামে এক আসামি জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে চার্জশিটভুক্ত সকল আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজের পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আবদুল মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি শেষ পর্যায়ে চলে আসছে। আশা করছি অতি দ্রুত মামলার বিচার কর্য শেষ করতে পারবো।’

সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউশন শাকিলা ইয়াছমিন মিতু বলেন, ‘সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলার বিচার কাজ বিলম্ব হচ্ছে। মামলাটির অধিকাংশ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে গুরুত্বরপূর্ণ দুএক জনের সাক্ষ্য এখনো বাদ রয়ে গেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন সময় ধরে সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। গুরুত্বপূর্ণ আর কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়েই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশ এ মামলায় ঠিকমত সহায়তা করছে না। তারা এ মামলাটি ভিন্নখাতে অর্থাৎ ডাকাতি সাজাতে চেয়েছিল। এজন্য সাক্ষীদের আনতেও তাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আশা করেছিলাম মামলাটির কার্যক্রম এ শবে বরাতের মধ্যে শেষ হয় যাবে, কিন্তু হলো না। আশা করছি খুবুই দ্রুত মামলার বিচার শেষ হবে এবং সকল আসামিদের যথাযথ সাজা দেবেন আদালত।

সারাবাংলা/এআই/এমআই

আমিন বাজার ছয় ছাত্র শবে বরাত সাভার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর