দুই জনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, তিন জন দোটানায়
২৬ এপ্রিল ২০১৯ ২২:০২
ঢাকা: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ না নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বগুড়া থেকে নির্বাচিত বিএনপির দুই সংসদ সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মোশাররফ হোসেন। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম ও উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া—এই তিন জন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ ইস্যুতে রয়েছেন দোটানায়। বিএনপি থেকে নির্বাচিত এই পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবারের (৩০ এপ্রিল) মধ্যে শপথ না নিলে পাঁচ জনের আসনই শূন্য হয়ে যাবে। সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে স্পিকারকে চিঠি না দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এসব আসনে উপনির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসন থেকে মো. মোশারফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ -৩ আসন থেকে হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে মো. আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।
এছাড়া, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গণফোরাম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর মৌলভীবাজার-২ এবং উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। বাকি ২৯২ টি আসনে পরাজিত হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
আরও পড়ুন: সময় বাকি ৫ দিন, ফের ঢাকায় বিএনপির ছয় প্রার্থী
নির্বাচনে ভয়াবহ বিপর্যায়ের পর ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জনসহ শপথগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দল ও জোটের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথমে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, পরে মোকাব্বির খান এবং সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান শপথ নেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণ করার পর গুঞ্জন ওঠে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে বিএনপির বাকি চার বিজয়ী প্রার্থী যেকোনো সময় শপথ নিতে পারেন। শপথ নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।
কিন্তু শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিজয়ী পাঁচ প্রার্থীর কেউ-ই শপথ গ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। বরং বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন শপথ গ্রহণ না করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই দুই বিজয়ী প্রার্থীর সাফ কথা, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত না নিলে তারা শপথ নেবেন না। দলের মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণের কথা ভাবতেই পারছেন না। তার মতে, দলের চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে তার পক্ষে শপথ গ্রহণ কিছুতেই সম্ভব না। চেয়ারপারসনে সম্মতি বা অনুমতি পেলে বিষয়টি ভেবে দেখতেন তিনি।
জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বহুবার বলেছি দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া শপথ নেওয়া আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। দল সিদ্ধান্ত না দিলে শপথ নেব না—এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নেই। জেলা ও উপজেলা বিএনপির সদস্য তিনি। জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের সহ-সভাপতি পদটিই তার সব চেয়ে বড় পদ। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিতে চান না তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পিতৃজেলা বগুড়ার লোক হওয়ার কারণে দল, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরাগভাজন হতে চান না তিনি।
আরও পড়ুন: হতাশ-ক্ষুব্ধ-বিব্রত নেতারা, ১০ ঘণ্টায়ও নেই বিএনপি’র প্রতিক্রিয়া
বয়সে তরুণ এই বিজয়ী প্রার্থী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেঁচে থাকলে এমপি হওয়ার সুযোগ জীবনে অনেকবার আসবে। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেব না। আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি দল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তো কোনো ঝামেলা থাকবে না।’
তবে বগুড়া থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত বাকি তিন সংসদ সদস্য রয়েছেন দোটানায়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তারা। শনিবার (২৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এই তিনজন।
জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়াটা যেমন কঠিন, তেমনি এলাকার জনগণের উপেক্ষা করাটাও অসম্ভব। এখনো তিন দিন সময় হাতে আছে, দেখা যাক কী হয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মো. আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারিনি। কী করব, কিছু ভাবতে পারছি না। আমার জন্য দোয়া করবেন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনো দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি দল শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত দেয়। ‘ পরে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ