লাশের পাশে পাওয়া কাগজে লেখা মোবাইল নম্বর ধরিয়ে দিল ‘খুনি’
২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া আগুনে পোড়া গলিত লাশের পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি হত্যায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের সময় কুড়িয়ে পাওয়া একটি কাগজে লেখা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে হত্যায় জড়িত যুবক জীবন আচার্য (১৮) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. শফি উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
রোববার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর হালিশহর থানার ফইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন খালপাড় এলাকায় তালাবন্ধ একটি বাসায় এই লাশ পাওয়া যায়। লাশটি সীতাকুণ্ডের কুমিরায় জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক জনৈক দিলীপের (১৮) বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো.আশিকুর রহমান।
এসি আশিকুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সিম কার্ডের একটি প্যাকেটের উপর লেখা একটি মোবাইল নম্বর পেয়েছিলাম। তবে সিম ছিল না। এই নম্বর ছিল জীবনের এক বন্ধুর। পরবর্তীতে ডিজিটাল তদন্তের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকারী ব্যক্তি এবং তার মাধ্যমে আমরা জীবনকে খুঁজে বের করি। তাকে শুক্রবার নগরীর হালিশহর নাথপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর জবানবন্দিতে সে দুর্জয় আচার্য নামে হত্যায় জড়িত আরও একজনের তথ্য দিয়েছে। তাকে আমরা গ্রেফতারের জন্য খুঁজছি।’
জীবনকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসি আশিকুর জানান, দিলীপ, জীবন ও দুর্জয়- তিনজনই জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক। তিনজন কারখানার পাশে একটি নির্জন জায়গায় একসঙ্গে গাঁজা সেবন করত। গাঁজার আসরে দিলীপের সঙ্গে তাদের কয়েকবার ঝগড়া ও মারামারি হয়। তখন দু’জন মিলে দিলীপকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। দিলীপকে হালিশহরের নাথপাড়ায় তাদের বাসার কাছাকাছি এলাকায় রেললাইনের পাশে গাঁজা সেবনের দাওয়াত দেয়।
তিনি বলেন, ‘গত ১৮ এপ্রিল রাতে দিলীপ সেখানে গাঁজা খেতে আসে। তাকে রেললাইনের পাশে একটি ঝোঁপের মধ্যে নিয়ে দু’জন শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর বস্তায় ভরে লাশ তোলা হয় একটি সিএনজি অটোরিকশায়। প্রথমে খালে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ফইল্যাতলী বাজার এলাকায় যাবার পর একটি পরিত্যক্ত বাড়ি দেখে সেখানে ঢুকে পড়ে তারা। সেখানে লাশ রেখে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গভীর রাত হওয়ায় বিষয়টি কেউ টের পায়নি।’
লাশ পোড়ানোর জন্য হালিশহরের বড়পোল এলাকা থেকে জীবন ও দুর্জয় কেরোসিন কিনে নিয়ে গিয়েছিল বলেও জানান এসি আশিকুর।
দিলীপের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এখনো উদঘাটন করা যায়নি বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘দিলীপের এক খালাতো বোনের স্বামীর মাধ্যমে আমরা জেনেছি তার বাবা-মা, ভাইবোন কেউ নেই। তাদের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার লক্ষ্মীছড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম বা বংশগত পদবি কিছুই এখনো পাওয়া যায়নি। তবে কারখানায় গেলে হয়ত পাওয়া যাবে।’
জবানবন্দি গ্রহণের পর জীবনকে আদালতে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে এসি আশিকুর জানান।
সারাবাংলা/আরডি/এসবি