আজ বর্ষণ, কাল আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী
২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:১৭
ঢাকা: কয়েকদিনের টানা গরম আর তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবনে স্বস্তির পরশ দিতে আজ বিকেলে নামছে বৃষ্টি। আর আগামীকাল দিনের যেকোন সময় বা রাতে আঘাত হানবে সাপের ফণার মতো দেখতে- ঘূর্ণিঝড় ফণী।
অবশ্য আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা ঘূর্ণিঝড় ফণীকে অতোটা শক্তিশালী হুমকি হিসেবে দেখছেন না।
শনিবার(২৭ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমুদ্রে এখনো বেশ শক্তিশালী রূপ ধারণ করে আছে ফণী। তবে উপকূল পর্যন্ত আসতে আসতে তার দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
আব্দুর রহমান জানান, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। বাতাসের বর্তমান গতিপথে বড় কোন পরিবর্তন না হলে রোববার যেকোন সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানবে এই ঘূর্ণিঝড়। আর এই ঝড়ের উপসর্গ হিসেবে শনিবার থেকেই শুরু হবে বৃষ্টি।
সাপের ফণার মতো দেখতে তাই এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয়েছে ফণী। বর্তমানে এই ঘূর্ণিঝড় শ্রীলংকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে যা ক্রমশ উত্তরে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যেই সাগর উত্তাল হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের উপকূল থেকে এটি ১৮০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ক্রমাগত শক্তি অর্জন করছে। এটি নিম্নচাপ অবস্থা থেকেই দুর্বল হয়ে যাবে, নাকি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে, সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে তার চরিত্র বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, সে দ্রুতই বেশ বড় ঘূর্ণিতেই বদলে যাবে। এবং দেশের দক্ষিণাংশে কিংবা ভারতের ভূমিতে বড় আঘাত হানবে।’
নিম্নচাপের প্রভাবে ইতোমধ্যেই বদলাতে শুরু করেছে প্রকৃতির আচরণ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বয়ে যাওয়া দাবদাহ কমে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা শীতল হওয়া শুরু করেছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস থেকে আগামীকাল ঘূর্ণিঝড়ের আশংকার কথা বলা হলেও প্রতিষ্ঠানটির ওয়েদার ম্যাপ বলছে ভিন্ন কথা। আবহাওয়া মানচিত্র বিশ্লেষেণ করে দেখা গেছে, আগামী কয়েকদিন দেশের আকাশে প্রচুর মেঘ জমা থাকবে, থেমে থেমে বৃষ্টিও হবে। সাগর থাকবে প্রচণ্ড উত্তাল। আর ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের এক কিংবা দুই তারিখে প্রবেশ করবে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে। ততদিনে ক্রমাগত বৃষ্টি ঝড়িয়ে এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়বে।
অপর দিকে, বিবিসির আবহাওয়া মানচিত্র ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে ভারতের ওড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অঞ্চলকে দেখাচ্ছে। সঙ্গে বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনাও কিছুটা কমিয়ে দেখাচ্ছে তারা। তবে এই সপ্তাহে দাবদাহের শংকা নেই দুটো ম্যাপের কোথাও।
এপ্রিল ও মে মাসকে আবহাওয়া অফিস নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়টি হয় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। সেই ঘটনায় ৬,০০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতিসহ দেড় লাখ মানুষ ও সত্তর হাজার গবাদী পশুর মৃত্যু হয়।
পুরনো নথিপত্র ঘেটে ধারণা করা হয়, বাংলা জনপদের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টিও ১৫৮২ সালের এপ্রিল-মে মাসে সংঘটিত হয়। আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল ইবন মুবারক রচিত আইন-ই-আকবরিতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেবারও প্রায় দুই লাখের মতো মানুষ মারা যায়।
সারাবাংলা/টিএস/জেডএফ