উবার কারে চালকের ধর্ষণের শিকার, পোশাককর্মীর আত্মহত্যা
২৮ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাইড শেয়ারিং সেবা উবারের একটি প্রাইভেট কারে চালকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক পোশাককর্মী। পরে মেয়েটি আত্মহত্যা করলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই উবারচালককে পুলিশ গ্রেফতার করলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঠানটুলি এলাকা থেকে উবারচালক মো. বাদশাকে (২৪) গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. সফি উদ্দিনের আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাদশার কারটিও জব্দ করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার মো. আশিকুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, বাদশার বাসা নগরীর ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি এলাকায়। ১৭ বছর বয়সী ওই পোশাককর্মীর বাসা মোগলটুলি এলাকায়। মেয়েটি নগরীর আগ্রাবাদে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। বছরখানেক আগে সেখানে বাদশাও চাকরি করত।
পুলিশ জানায়, গত ২৪ এপ্রিল সকালে মোগলটুলির বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। তার বোন ডবলমুরিং থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাদশা নিয়মিত মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত। ক্রমাগত যৌন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে তার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয় বলে জানান সহকারী পুলিশ কমিশনার আশিকুর।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, যৌন হয়রানির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর আগে স্বজনদের কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেনি মেয়েটি। অভিযুক্ত বাদশাকে গ্রেফতারের পর পুরো বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে।
বাদশা’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বাদশা পোশাক কারখানা থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর উবারে প্রাইভেট কার চালাতে শুরু করে। পোশাককর্মী মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করেছে সে। বাদশা জানায়, ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় পোশাক কারখানা ছুটির পর বাদশা তাকে প্রাইভেট কারে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। একপর্যায়ে নির্জন একটি স্থানে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে কারের ভেতরে দুইবার ধর্ষণ করে সে। এসময় মেয়েটি জ্ঞান হারায়।
বাদশা জানায়, মুখে পানি ছিটিয়েও জ্ঞান না ফেরায় মেয়েটিকে নিয়ে কার চালিয়ে সে পাঠানটুলিতে নিজের বাসায় যায়। বাসা থেকে বাদশা ও তার মা মিলে মেয়েটিকে নিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পুলিশ পরিদর্শক জহির সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক মেয়েটির শরীর দুর্বল উল্লেখ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়। বাদশা ও তার মা মেয়েটিকে নিয়ে নিজেদের বাসায় যায়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করে বাদশা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে মেয়েটির ভগ্নিপতি হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে বোন কর্মস্থলে যাওয়ার পর একা বাসায় সে আত্মহত্যা করে।’
জহির বলেন, ‘হাসপাতালের এক আয়াকে মেয়েটি বলেছিল, বাদশা তার মুখ চেপে ধরার পর সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এরপর কী হয়েছে সে আর কিছুই জানে না। মুখ চেপে ধরার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। বাদশাকে গ্রেফতারের পর সে-ও জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্বীকার করেছে। জবানবন্দিতেও বিষয়টি উঠে এসেছে।’
জবানবন্দি গ্রহণের পর বাদশাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বাদশার বাসা থেকে মেয়েটির ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক জহির।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর