ঋণ খেলাপিদের তালিকা না দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হাইকোর্ট
১ মে ২০১৯ ০৮:৫০
ঢাকা: বিশ বছর ধরে এককোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপিদের তালিকা, ঋণের পরিমাণ এবং সুদ মওকুফের তালিকা চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি না দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিগত ২০ বছরে এককোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপিদের তালিকা, কি পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে, ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে তা বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার তথ্য জানতে চেয়ে আড়াই মাস আগে হাইকোর্ট আদেশ দিলেও তা আদালতকে জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বন্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিষয়ে আদালতের রুলের জবাব দাখিল করেনি ব্যাংকটি। উল্টো ঋণ খেলাপিদের আরো সুবিধা দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব কারণে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের আচরণে ক্ষোভ জানিয়েছেন আদালত। এ অবস্থায় ওইসব বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনকারী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানির সময় আদালত এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা দেখি ছোট ছোট ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে মামলা হয়। কিন্তু রাঘব বোয়ালরা যারা আছেন, তারা ব্যাংক লুট করে ফেললো। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হচ্ছে না। বরং বারবার তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আদালত বলেন, আমরা একমাসের মধ্যে কমিশন গঠন বিষয়ে রুল দিলাম। কিন্তু তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। জবাবও দেয়নি। অথচ পত্রিকায় দেখতে পাই বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিতে আদেশ জারি করছে। তাহলে কি আমরা বলবো যে আদালতের আদেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সাকুর্লার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক?
এসময় রিট আবেদনকারীর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, ঋণ খেলাপির তালিকা ছোট করতে এবং আদালতের আদেশ অকার্যকর করতেই নতুন সার্কুলার জারি করছে।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান আদালতে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপির তালিকার জন্য তার তত্বাবধানে থাকা ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য আসার পরই ঋণ খেলাপির পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে আদালতকে জানানো হবে।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট সকল বিবাদীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণ খেলাপির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/জেএএম