Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শ্রমিকবান্ধব’ শ্রম আদালতে ঝুলে আছে ১৭ হাজার মামলা!


২ মে ২০১৯ ০৮:৫৪

ঢাকা: রুহিলা বেগম ‘ইউরো জিন্স’ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। হঠাৎই মালিকপক্ষ তাকে অব্যাহতি দেয়। পরে চাকরিচ্যুতির বৈধতা ও বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা আদায়ে ২০১৪ সালে তিনি ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করেন। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেছে। কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি তার মামলা।

‘দিক অ্যাপারেল লিমিটেড’ কোম্পানিতে চাকরি করতেন মো. রোকনউজ্জামান। দীর্ঘদিন বেতন বকেয়া থাকায় ২০১৩ সালে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনিও। তার মামলাটি এখন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রুহিলা বেগম আর রোকনউজ্জামানই নয়, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করেছিলেন কামরুজ্জামান, মাছিনুল হাসান ও খবির উদ্দিন মিয়া। তাদের মামলাটি যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের অপেক্ষায় আছে।

খবির উদ্দিন মিয়াদের মতো এ রকম ১৭ হাজার ৬০৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে দেশের সাতটি শ্রম আদালত ও একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে শ্রম আদালত না থাকায় ওইসব জেলার শ্রমিকদের ভোগান্তি আরও বেশি।

শ্রম আদালতে মামলার জট, কখনও বিচারক-শূন্যতার কারণে বিচারপ্রার্থীদের বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আবার কোনো শ্রমিক নিজের পক্ষে রায় পেলেও মালিকপক্ষের করা আপিলের কারণে তাকে নতুন করে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কারণ, ঢাকার বাইরে দেশে আর কোনো আপিল ট্রাইব্যুনাল নেই। এছাড়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানপদটিও দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে শূন্য।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত দেশের সাতটি শ্রম আদালত ও একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৭ হাজার ৬০৮টি। এর মধ্যে দেশের একমাত্র শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ১ হাজার ৪৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৪টি মামলা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৬, দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৫ হাজার ২৬৩ এবং ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ৪ হাজার পাঁচটি মামলা। চট্টগ্রামের প্রথম শ্রম আদালতে ১ হাজার ৫১০টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৫৭৮টি মামলা বিচারাধীন। এছাড়া খুলনার শ্রম আদালতে ২১৪টি ও রাজশাহীর শ্রম আদালতে ৪১৫টি মামলা বিচারাধীন।

বিজ্ঞাপন

শ্রম আদালতে বিশাল মামলার জট সম্পর্কে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি জাহানারা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রম আদালতগুলো শ্রমিকবান্ধব হলেও মামলার জটে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। মামলা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় শ্রমিকরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে।’ মামলার জট থেকে উত্তরণের জন্য শ্রম আদালত বাড়ানো ও বিচারক সংকট দূর করার দাবি জানান তিনি। দেশে শ্রমিকের তুলনায় আদালতের সংখ্যা অপ্রতুল বলেও উল্লেখ করেন এ নেত্রী।

গ্রীণবাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা মনে করেন, মামলা করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। এ কারণে তারা হতাশ হয়ে চলে যান। অনেক সময় মামলার রায় হলেও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব থেকে মুক্তির জন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও আদালতের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

এছাড়া শিল্পাঞ্চল হিসেবে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে সুলতানা বেগম বলেন, বিচারক শূন্যতার কারণে অনেক সময় বিচার কাজ বন্ধ থাকে। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা শ্রমিকদের মানবাধিকার হরণের শামিল বলেও মনে করেন তিনি।

শ্রম আদালতে মামলা নিয়ে কাজ করেন আইনজীবী মুরাদ সারওয়ার ভুইয়া। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, অন্যান্য মামলার চেয়ে শ্রম আদালতে মামলার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বিচারকেরা।

তিনি বলেন, আমি যতটা দেখেছি, তাতে শ্রম আদালতের অধিকাংশ মামলাই মালিকদের আপসে মীমাংসা হয়ে যায়। তারপরও কিছু কিছু মামলা বিচারের শেষ পর্যন্ত গড়ায়। তাতেও শ্রমিকদের পক্ষে অধিকাংশ মামলার রায় হয়। এ কারণে শ্রম আদালতকে শ্রমিক বান্ধব আদালত হিসেবে আমি উল্লেখ করতে চাই।

এদিকে, শ্রমজীবী মানুষের আইনি সেবাপ্রাপ্তি সহজ করতে ঢাকায় বিদ্যমান তিনটি শ্রম আদালতের মধ্যে দু’টি টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে স্থানান্তর করার কথা বলা হলেও আজও সেটি কার্যকর হয়নি।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেএএম/টিএস

আপিল ট্রাইব্যুনাল মামলা শ্রম আদালত

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর