ঘূর্ণিঝড় ফণী: আ.লীগের কেন্দ্রীয় সমন্বয়, বিভাগীয় মনিটরিং টিম গঠন
৩ মে ২০১৯ ১৫:২৪
ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিম ও বিভাগীয় টিম গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির মনিটরিং টিমের ১৬ জন সার্বক্ষণিক ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার (৩ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক জরুরি সভায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ ও করণীয় গ্রহণ করে দলটি।
এদিকে গত কয়েকদিন থেকে ফণীর তাণ্ডব মোকাবিলায় এরইমধ্যে সরকারি ও দলীয়ভাবে উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। আজ মধ্য রাতে প্রবল শক্তি নিয়ে ফণী উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস আশঙ্কা করছে। ফণীর প্রভাবে চার-পাঁচ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে উপকূলের নিম্নাঞ্চল। তাই এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা সব মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ফায়ার সার্ভিস, নৌ, সেনা, বিমানবাহিনীসহ ১৯ উপকূলীয় জেলার প্রায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তাই ফণীর তাণ্ডব পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি দলীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ ও করণীয় নিয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আমাদের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আমাদের এই অফিসে (আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়) ঘূর্ণিঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানার পর সম্পূর্ণভাবে রিকভারি না করা পর্যন্ত এই সার্বিকভাবে সবকিছু মনিটরিং করবে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে যেসব স্কুল ও কলেজ আছে সেগুলোর প্রধান শিক্ষককে চাবি নিয়ে সার্বক্ষণিক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগে কোনো এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ওই এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ঔষধ এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে গতকাল রাতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ আমি নিজে উপকূলীয় এলাকার জেলা বা উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্যও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেছি, বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। তারা সকলেই সার্বিকভাবে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। দলীয়ভাবে আমাদের কাজ হচ্ছে, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়া। এরজন্য এসব এলাকায় মাইকিং থেকে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি এলাকায় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করি এর মাধ্যমে সকল প্রকার ক্ষয় ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হব।’
‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির পক্ষ থেকে একটা মনিটরিং সেল করা হয়েছে। উপ কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম মুন্সি এবং সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দীর নেতৃত্বে ১৬ জন সদস্য সার্বিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন। দুর্গত এলাকার আক্রান্ত মানুষ প্রাথমিকভাবে এখানে যোগাযোগ করলে তাদের সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের যে টেলিফোন নাম্বারগুলি আছে, সেই নাম্বারগুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারবে। ‘৯৬৭৭৮৮১, ৯৬৭৭৮৮২’ এই দুটি নাম্বার আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের, এই দুই নাম্বার সার্বক্ষণিকভাবে খোলা থাকবে।
এছাড়াও আমাদের সভাপতির অফিসের ফ্যাক্স নাম্বার (৯৬৬৬৫৫০) আছে। কেউ চাইলে সেখানেও তথ্য পাঠাতে পারবে। এছাড়াও আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় বিশেষ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে আমাদের মেডিকেল টিম সেইসব এলাকায় গিয়ে মানুষের সহায়তায় এগিয়ে যাবে। দলীয়ভাবে ত্রাণও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সেটাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘আর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আমাদের একটা কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটিটা আমাদের এই অফিসে ঘুর্ণিঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা ঘুর্ণিঝড়ের আঘাত হানার পর সম্পূর্ণভাবে রিকভারি না করা পর্যন্ত এই কমিটি সার্বিকভাবে মনিটরিং করবে। এই কমিটির দায়িত্ব হলো দিক নির্দেশনা দেওয়া।
এই কমিটির সদস্যরা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এনামুল হক শামীম, হাছান মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী, ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, বেগম ফরিদুন্নাাহার লাইলী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ফখরুল ইসলাম মুন্সি।
এছাড়াও তিনটি বিভাগীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই তিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্ব পালন করবেন। খুলনা বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বরিশাল বিভাগে আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং চট্টগ্রাম বিভাগে এনামুল হক শামীম দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটি কোথাও ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই সব এলাকায় যাবেন এবং দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এবং দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবেন। আর আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।
এদিকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত থেকে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই