আ.লীগ ও বিএনপি নেতা মিলে এবার দেড় ঘণ্টার সড়ক অবরোধ
৫ মে ২০১৯ ১৭:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে বাধার পর এবার অনুসারীদের নিয়ে দেড়ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ও বিএনপি নেতা মনোয়ারা বেগম মণি। এসময় তারা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে বিচ্ছিন্ন করা বিদ্যুৎ সংযোগ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালু না করলে ফের সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৫ মে) দুপুর সোয়া ২টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ইস্পাহানির মোড়ে মাসুম ও মণির নেতৃত্বে সড়ক অবরোধ করে লালখান বাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরত কয়েক শ নারী-পুরুষ।
ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, শুরুতে দুই লেন সড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে রাখে তারা। এতে পুরো সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখেও অপেক্ষমাণ গাড়ির জট তৈরি হয়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের এলাকায়ও। ওয়াসা, দামপাড়া, আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দিদারুল আলম মাসুম ও মনোয়ারা বেগম মণিকে অনুরোধ করে সড়কের একপাশ থেকে লোকজন সরিয়ে নেন। এতে প্রায় আধাঘণ্টা সীমিতভাবে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ইস্পাহানি মোড়ের গোলচত্বরে সড়ক বিভাজকের ওপর দাঁড়িয়ে তারা সমাবেশ করে। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সমাবেশ শেষ করে মাসুম ও মণি বিক্ষুব্ধ লোকজনকে নিয়ে আবারও লালখান বাজারে চলে যান। তবে এর আগে পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের দাবির কথা শোনেন এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।
সমাবেশে দিদারুল আলম মাসুম ঘোষণা দেন, সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় বিচ্ছিন্ন করা সংযোগ পুনরায় চালু করতে হবে। অন্যথায় ১১টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ চলবে।
সড়ক অবরোধের সময় উপস্থিত লোকজনকে চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নামে শ্লোগান দিতে শোনা গেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঝুঁকির কথা বলে একটা পুরো এলাকার বৈধ-অবৈধ সব বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গেছে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট। এমনকি তারা ট্রান্সফরমার নিয়ে যেতে চাইলে আমরা সেটা আটকায়। অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। বৈধগুলো কেন কাটা হল? ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিলে আমি আবারও রাস্তায় নামব।’
সরকারি দলের নেতা হয়ে বিএনপি নেত্রীকে নিয়ে সড়ক অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুম বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করেছে। গাড়ি ভাংচুর কিংবা অন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না হয়, সেটার জন্য আমি গিয়েছি। মনোয়ারা বেগম মণি বিএনপির নেত্রী হলেও তিনি কাউন্সিলর। এ ছাড়া মহিলা হওয়ায় তাকে আমি কখনো ডিস্টার্ব করি না।’
চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সভাপতি কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মণি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) বিদ্যুতের লাইনগুলো কেটে দেওয়ার পর থেকে মতিঝর্ণার লোকজন রাস্তায় আছে। এই গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ ছাড়া তো তারা বাসায় থাকতে পারছে না। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র মহোদয় এবং পিডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা কাল (সোমবার) সকাল ১১টার মধ্যে বৈধ সংযোগগুলো চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের জানিয়েছি। এজন্য তারা সড়ক ছেড়ে চলে গেছে।’
এর আগে শনিবার (৪ মে) সকালে নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণা ও বাটালি পাহাড়ে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকা পাঁচটি ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনাররা। মতিঝর্ণা পাহাড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি ট্রান্সফরমার থেকে অবৈধভাবে দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ট্রান্সফরমারটি জব্দ করার সময় মাসুম ও মণি মিলে তাদের বাধা দেন। এ সময় ট্রান্সফরমারটি কাউন্সিলরের জিম্মায় দিতে বাধ্য হন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জিম্মানামায় সাক্ষী হন দিদারুল আলম মাসুম।
চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার, জামালখান ও এনায়েতবাজার ওয়ার্ড মিলে সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত মনোয়ারা বেগম মণি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির ডাকা বিভিন্ন হরতাল-অবরোধে একাধিকবার জেলেও গিয়েছিলেন মণি। আর সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিদারুল আলম মাসুম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই