Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শিক্ষার্থীরা পরিশ্রম করেই এই ফল অর্জন করেছে’


৬ মে ২০১৯ ২২:৩৮

ঢাকা: প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করলেও এবার তার সম্মতি নিয়ে ফল প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সোমবার (৬ মে) মাধ্যমিক ও সমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।

এ বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় দশ শিক্ষাবোর্ড থেকে ২১ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫। শতকরা হিসেবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর হার চার দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘ফলাফল যেটি হয়েছে তা নিয়ে আমি খুশি। এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো প্রশ্নফাঁস না হওয়া। এটা বলা যায়, এই ফলাফল শিক্ষার্থীরা প্ররিশ্রম করেই অর্জন করেছে। তাদের জন্য শুভকামনা। তবে প্রশ্নফাঁস না হওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলেই প্রতিবার ফলাফল শেষে আত্মতৃপ্তি আসবে।’

এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ২১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন ছাত্রী ও ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন ছাত্র। এবার মোট পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ঢাকায় ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, সিলেটে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, যশোরে ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও বরিশাল বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এছাড়া মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে ৮৩ দশমিক তিন ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৭২ দশমিক ২৪ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে।

দশটি শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলে এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে। মেয়েদের পাসের হারও ছেলেদের চেয়ে দুই দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এবছর ৫৩ হাজার ৪৮৪ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। অপরদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র সংখ্যা ৫২ হাজার একশ ১০ জন। এছাড়া ছেলেদের পাসের হার ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ। যেখানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এর আগে ২০১৮ সালেও ছাত্রদের (৭৬ দশমিক ৭১) তুলনায় ছাত্রীদের (৭৮ দশমিক ৮৫) পাসের হার ছিল ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে ছেলেদের পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মেয়েদের ছিল ৮০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে ছেলেদের পাসের হার ছিল ৮৮   দশমিক ২ শতাংশ এবং মেয়েদের ছিল ৮৮  দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এদিকে গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গতবছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন, যা এবার ৫ হাজার ৩৫ জন কমে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জনে নেমেছে। শতকরা হিসাবে গতবছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৪৬। এবার সেই হার দশমিক ৫০ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে এবারও ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। আর সারাদেশে পাসের হারে এগিয়ে আছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। রাজশাহী বোর্ডে এবার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।

অপরদিকে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে তলানিতে রয়েছে সিলেট বোর্ড। দেশের বাইরের আটটি কেন্দ্রে পাসের হার ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪২৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে পাস করেছে ৩৮৯ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৩৪ জন।

জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে এবারও ঢাকা বোর্ড এগিয়ে রয়েছে। এ বোর্ডে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবছর ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪১ হাজার ৫৮৫ জন।

এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ২২ হাজার ৭৯৫ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৮ হাজার ৭৬৪ জন, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৯৪৮ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭ হাজার ৩৯৩ জন, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৮৯ জন, সিলেট বোর্ডে ২ হাজার ৭৫৭ জন ও দিনাজপুর বোর্ডে ৯ হাজার ২৩ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এত আনন্দের খবরের মাঝেও দুই বোর্ডের ফল নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ যশোর বোর্ড ও মাদরাসা বোর্ডে এবার ফলাফল হার চোখে পড়ার মতো বেড়েছে।

মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ২০১৮ সালে ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হয়েছিল যশোর বোর্ডে। এর আগের বছর ২০১৭ সালেও বোর্ডটিতে ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ ছিলো পাসের হার। তবে এ বছর পাসের হারের এই অংকটি ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে একলাফে চলে গেছে ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশে।

একই অবস্থা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডেও। গতবছর এই বোর্ডে ৭০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও এবার তা বেড়ে ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

শিক্ষাবোর্ডের বিগত বছরের ফলাফলের তুলনায় এই দুটি শিক্ষাবোর্ডের ফলকে অস্বাভাবিক ভাবে না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক সৈয়দা তাহমিনা আখতারও একই কথা বলেছেন এই প্রতিবেদককে।

সারাবাংলা/টিএস/এমআই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর