রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নেপিডো
৭ মে ২০১৯ ২১:০৭
ঢাকা: স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন করতে সদ্য সমাপ্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলকে একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কূটনীতিক সারাবাংলাকে জানান, ঢাকার দেওয়া প্রস্তাবে কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি নেপিডো।
মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকটি গত শুক্রবার (৩ মে) মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।
‘প্রত্যাবাসনের জন্য সেখানে (মিয়ানমারে) কোনো পরিবেশই তৈরি করা হয়নি’ উল্লেখ করে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকে আমরা বলেছি, প্রত্যাবাসন তো আমাদের হবে না, প্রত্যাবাসন হবে রোহিঙ্গাদের। তাই কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে যে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, তাদের প্রতিনিধি দল এনে রাখাইনে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কী কী করছে তা দেখানো প্রয়োজন। মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কতটুকু ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছে, তা রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল সরেজমিন ঘুরে দেখলে তাদের আস্থা অর্জন সহজ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি কমপ্রিহেনসিভ ডক্যুমেন্ট তৈরি করতে বলেছি। রোহিঙ্গাদের সামনে একটি প্যাকেজ উপস্থাপন করে তাদের সঙ্গে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কথা বলুক, যেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার যা যা করেছে, সবই থাকবে। এই প্রস্তাবের বিপরীতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা হ্যাঁ বা না— কিছুই বলেনি।’
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, বিশেষ করে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বড় আকারের কনফারেন্স আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাবের বিপরীতে বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা জানান, তাদের পক্ষে এখন এ ধরনের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তখন আমরা বলেছি যে কক্সবাজারে জেআরপি (জয়েন্ট রেসপন্স প্রোগ্রাম) ধরনের কার্যক্রম চলছে, রাখাইনে এই ধরনের কিছু করতে। তারা এই প্রস্তাবেও সাড়া দেয়নি।’
এর আগে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে ওই বছরেরই ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকা-নেপিডোর মধ্যে সই হওয়া ওই চুক্তিতে বলা হয়, ‘২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চুক্তি সইয়ের প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবারই এড়িয়ে গেছে নেপিডো।
জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছে, প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।
এর আগে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার জের ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হয়। দেশটির সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে স্থানীয় মগদের নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।
সারাবাংলা/টিআর