‘শ্রমবাজারে স্থানীয়দের চেয়ে এগিয়ে রোহিঙ্গারা’
৯ মে ২০১৯ ১৪:১০
ঢাকা: কক্সবাজারের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির হারে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গারা এগিয়ে রয়েছেন বলে উঠে এসেছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফ্রি) যৌথ ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই শ্রমবাজারে যুক্ত আছেন। স্থানীয়দের মধ্যে এর হার ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এভাবে রোহিঙ্গাদের কাজের অনুমতি দেওয়া হলে স্থানীয় শ্রমবাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই গবেষণায়।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইডিএস ও ইফ্রি’র গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিআইডিএস গবেষক ড. মোহাম্মদ ইউনুস গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, অনেক রোহিঙ্গার হাতে নগদ টাকা নেই। তাই, নগদ টাকার জন্য স্থানীয়ভাবে কাজ করেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা গত বছরে যেখানে ১৩৮ দিন কাজ করেছে, সেখানে রোহিঙ্গারা কাজ করেছে ৫৮ দিন। ৩১ শতাংশ রোহিঙ্গা কোনো না কোনো কাজ করছে, যেখানে ৫৪ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। স্থানীয় পুরুষরা যেখানে ৬২ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ করে সেখানে রোহিঙ্গা পুরুষরা ৪৩ শতাংশ কোনো না কোনো কাজে যুক্ত। রোহিঙ্গারা মূলত কৃষি ও সেবা খাতে কাজ করছে। শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির হারে স্থানীয়দের চাইতে রোহিঙ্গারা এগিয়ে আছে। রোহিঙ্গাদের ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই শ্রমবাজারে যুক্ত আছেন। স্থানীয়দের মধ্যে এর হার ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বিআইডিএস ও ইফ্রির গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা সার্বিকভাবে বাংলাদেশে ভালো রয়েছে। তবে শিশুদের পুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া তাদের জন্য সরবরাহ করা খাদ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের দেওয়া সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ১২ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। গর্ভবতীদের মধ্যে অপুষ্টির হার ২৩ শতাংশ। তারা কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরার পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘১২ লাখ রোহিঙ্গা এ দেশে আশ্রয় নেওয়ায় বাজেটের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেটি আমরা মেনে নিয়েছি। তারা এখানে যে কয়েকদিন আছে, আমরা চাই তারা ভালো থাকুক। গবেষণায় উঠে এসেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে সেগুলো চুরি হচ্ছে না। বরং সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বণ্টন করা হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা শিশুদের পুষ্টির অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়। এটা কারও কাম্যও নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এস মুরশিদ বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছে সরকার।’ গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। রোহিঙ্গাদের ক্যালরি গ্রহণের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। দারিদ্র্যের অবস্থাও ততটা খারাপ নয়। তবে কক্সবাজার যেহেতু ছোট্ট একটি জায়গা, এখানে রোহিঙ্গাদের ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে স্থানীয় শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ সিচার্ড রাগান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইফ্রির গবেষক ড. পাওয়েল দোরোস, বিআইডিএসের গবেষক ড. বিনায়ক সেন ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
সারাবাংলা/জেজে/জেএএম