Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাঁচ সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে উত্তরার অপরাধ জগৎ


১১ মে ২০১৯ ০৭:৩২

ঢাকা: আনোয়ার হোসেন, মো. আবদুল্লাহ, মো. তৈয়ব, জুয়েল রানা ও সোহেল ওরফে আঙুল কাটা সোহেল— পাঁচ জনের একটি চক্র। তবে পাঁচজনেরই রয়েছে আলাদা আলাদা দল। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, দোকান লুটসহ বিভিন্ন ছোটখাটো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও এই চক্রের নিয়ন্ত্রণে। আলাদা আলাদা দল গঠন করে নানা অপরাধে লিপ্ত। পুলিশের কাছে চক্রটির খবর রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে একটি অপহরণ মামলার সূত্র ধরে পুলিশ এদের কথা জানতে পারে। বর্তমানে চক্রটির দুই সদস্য জেলে রয়েছে। বাকি তিন জনকে খোঁজা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান। তিনি জানান, এদের মধ্যে তিন জন এক দফা গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে বেরিয়ে যান। পরে ওই তিন জনের মধ্যে দু’জনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রাজধানীর অদূরে কামরাঙ্গীরচর, নারায়ণগঞ্জে এদের রাত্রীযাপনের তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মশিউর রহমান বলেন, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই যেকোনো তালাবদ্ধ দোকান খুলে লুট করতে পারে এই চক্রের সদস্যরা। এছাড়া ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ছিনতাই, ডাকাতি এসব এদের নিত্য কাজ। ভুয়া ডিবি সেজে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অপরাধী চক্রটি রাজধানী থেকে অপহরণ করে তাদের গাজীপুর-মাওনার দিকে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয় বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে।

ডিবির বিমানবন্দর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মহররম আলীও এই চক্রটির কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত শীর্ষ এই অপরাধীর অনেককেই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগই জামিনে বেরিয়ে আবারও একই কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়ছে।’

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে এই অপরাধী চক্রের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান মশিউর রহমান। ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরুল আমিন ওই অপহরণের শিকার হন।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২৪ অক্টোবর সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ইসিবি চত্বর ও বি জে টাওয়ারের মাঝামাঝি পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময় একটি মাইক্রোবাস তাকে তুলে নিয়ে নিয়ে যায়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গাড়িটি থামিয়ে ভেতর থেকে কেউ একজন মানিকদি রাস্তা কোন দিকে জানতে চান। হাতের ইশারায় রাস্তা দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে থাকা লোকজন তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। দুই পাশে থাকা দু’জন দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র কোমরে ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে বলতে থাকে, ‘কোনো কথা বলবি না।’ মাইক্রোবাসটি আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পার হয়ে টঙ্গীর দিকে যেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আসামিরা তার মুখের টেপ খুলে দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং হত্যার হুমকি দেয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, মাওনা ব্রিজ পার হয়ে ময়মনসিংহ হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি শালবাগানের মধ্যে নিয়ে মাইক্রোবাস থেকে নামতে বলে অপহরণকারীরা। সেখানে আরও দু’টি প্রাইভেট কারে ছয় জন ছিল। তারা সবাই ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা আনার জন্য বলে। তাদের কথায় রাজি না হলে দুই-তিন জন রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে নূরুল তার শ্যালক জহিরকে ফোন দিয়ে অপহরণকারীদের সরবরাহ করা পাঁচটি মোবাইল নম্বরসহ আরও কয়েকটি নম্বরে মোট ৩ লাখ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পরে তারা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট, মানিব্যাগ ও ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম কার্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আধা ঘণ্টা পর চলে যাওয়ার কথা বলে। এরপর তিনি রাস্তায় অনুরোধ করে একটি পিকআপ ভ্যানে করে বাসায় ফেরেন। পরে থানায় মামলা করেন।

ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মামলাটির তদন্তে কোনো কূল-কিনারা না পাওয়ায় তদন্তভার ন্যস্ত হয় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। তারাই এই অপরাধী চক্রকে শনাক্ত করে।

মহানগর গোয়েন্দা ও উত্তরা বিভাগের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, উত্তরা, বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর হুন্ডির টাকা টার্গেট করেন জুয়েল রানা ও তার দলবল। জুয়েল রানার নেতৃত্বে এই চক্র ভুয়া ডিবি সেজে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের পর ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে হুন্ডির টাকা বলে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জুয়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করে মিলনসহ ছয় জন। উত্তরা পূর্ব ও উত্তরা পশ্চিম থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

ডিবির বিমানবন্দর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মহররম আলী বলেন, ‘অপহরণ চক্রের মূল হোতা হিসেবে আনোয়ার নামে একজনকে দীর্ঘদিন ধরেই খোঁজা হচ্ছিল। দীর্ঘ চেষ্টার পর গত ১৬ এপ্রিল গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানাধীন দত্তপাড়া শাহাদতের বাড়ির গ্যারেজে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ধারালো অস্ত্র, একটি প্রাইভেটকার, কালো রঙের টেপ ও নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় চক্রের মূল হোতা আনোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী বাবুল মিয়াকে (৩৫)। এখন উত্তরা এলাকার বেশিরভাগ অপরাধচক্রের শীর্ষ হোতা ও তাদের সহযোগীরা বাইরে রয়েছে। তাদেরও গ্রেফতারের জন্য খুঁজছি।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, একসময় তৈয়বের শিষ্য ছিলেন জুয়েল রানা। গত বছর এক ব্যবসায়ীর ৪০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৈয়ব ও জুয়েল ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তৈয়বের আগে জুয়েল রানা কারাগার থেকে বের হয়ে আলাদা দল গঠন করেন। এর কিছুদিন পর তৈয়বও জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আলাদা দল নিয়ে উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতে থাকেন।

পুলিশ জানায়, গত সপ্তাহে তৈয়ব নরসিংদী এলাকায় ‘ডাকাতি’ করতে গিয়ে ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়। ওই সময় তার কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। তবে তার দলের বাকি সাত-আট সদস্য এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য, জুয়েল রানার নেতৃত্বে অন্তত ১২ সদস্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। উত্তরার বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা কখনো চালক ও যাত্রী সেজে বিভিন্ন লোকজনকে উঠিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মুক্তিপণ আদায় করেছে, আবার কখনো ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে কৌশলে গাড়িতে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেছে। একই অভিযোগে দলের অন্যতম আরেক সদস্য রাজু আহমেদ ওরফে চান মিয়াকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এডিসি মহররম।

তিনি জানান, উত্তরা এলাকায় যেসব দোকানে বেচাকেনা বেশি, সেসব দোকানকে টার্গেট করে ডাকাতি ও ছিনতাই করে থাকে আবদুল্লাহ গ্রুপের লোকজন।

ডিবির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, একই এলাকার সোহেল ওরফে আঙুল কাটা সোহেলের নেতৃত্বে ৫ থেকে ১২ জনের একটি দল রয়েছে। তারা বিভিন্ন তালাবদ্ধ দোকান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খুলে ফেলে সবকিছু নিয়ে যায়। এই দলের বেশিরভাগ সদস্য গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। সোহেল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

অপরাধ জগৎ অপহরণ উত্তরা ছিনতাই দোকান লুটপাট সন্ত্রাসী

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর