ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ, বন্ধ হয়নি কোচিং সেন্টার
২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:২৫
উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রশ্ন ফাঁস রোধে এসএসসি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার—‘শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এমন সিদ্ধান্তের পরও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ হয়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কাগজে বা মৌখিকভাবেও কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় যেসব কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও পুলিশের ভয়ে অনেক কোচিং সেন্টার বন্ধ করেছে।
‘আজ থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ’ গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এমন ঘোষণার পর রাজধানীর ফার্মগেট, নীলক্ষেত, লক্ষ্মীবাজার, যাত্রাবাড়ী ও শান্তিনগর এলাকায় অনুসন্ধান করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে প্যারামাউন্ট ও সাইফুরস অন্যতম। সোমবার সকাল ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি কোচিং সেন্টারই খোলা রয়েছে। লক্ষ্মীবাজার গার্লস হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের শিক্ষার্থীরা সেখানে কোচিং করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্যারামাউন্ট কোচিং সেন্টারের লক্ষ্মীবাজার শাখার ম্যানেজার বলেন, আমরা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছি। তবে অন্যান্য ক্লাসের কোচিং চালানো হচ্ছে। সরকার আসলে কি নির্দেশনা দিয়েছে তা জানেন না তিনি। অথচ লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র করা হয়ে থাকে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় রয়েছে, ফোকাস, রেটিনাসহ বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে ফোকাস ও রেটিনা কোচিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। তবে ইউনিএইড ও সাইফুরসের অফিস খোলা রয়েছে এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোচিং করানো হচ্ছে।
নীলক্ষেত এলাকায় বেশ কিছু কোচিং সেন্টার থাকলেও বাইরের সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাইরে দেখলে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নাই যে, এখানে কোচিং সেন্টার আছে। নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে পরিক্রমা, অদিতি, কনফিডেন্স, কনফার্মসহ বেশ কিছু কোচিং সেন্টার।
ভেতরে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা। লালবাগ গার্লস স্কুল, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বুয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব কোচিং সেন্টারে ক্লাস করছেন।
লালবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মেহজাবিন সারাবাংলাকে বলেন, কোচিংয়ের ভাইয়ারা বলেছেন, বাইরে বন্ধ থাকলেও কোচিংয়ের ভেতরে ক্লাস চলবে। তাই আমরা ক্লাস করতে এসেছি।
ফার্মগেট এলাকায় রাজধানীর সবচেয়ে বেশি কোচিং সেন্টার রয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনো কোচিং সেন্টার নেই যে, যার শাখা ফার্মগেটে নেই। এমনকি বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারের হেড অফিস ফার্মগেটে রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ফোকাস, রেটিনা, ইউনিএইড, কনফিডেন্স, কনফার্মসহ ডজন খানেক কোচিং সেন্টারের অফিস খোলা রয়েছে। কোনটাতে চলছে ক্লাসও।
শান্তিনগরের আশপাশে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোতেও চলছে নিয়মিত ক্লাস। সিদ্ধেশ্বরী ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ওইসব কোচিং সেন্টারগুলোতে নেওয়া হচ্ছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী আবির বলেন, স্যার বলেছেন কোচিংয়ে আসতে তাই এসেছি। না আসলে কোচিং থেকে বাদ দিতে চেয়েছেন, তাই আব্বু আম্মু কোচিংয়ে আসতে বলেছেন।
কোচিং বন্ধ রাখতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী অথচ তোমরা ক্লাস করছো জানতে চাইলে আবির বলেন, টেলিভিশনে শুনেছি যে,পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনার কথা।
এ ব্যাপারে ডিএমপির তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বলেন, লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো নির্দেশনাই না পাওয়ায় বন্ধ না কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরকম কোনো নির্দেশনা পেলে অবশ্যই কোচিং সেন্টার বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, এ রকম কোনো নির্দেশনা পাইনি তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আগে থেকেই বলা আছে। তবে খোলা রাখা কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদারও খোলা রাখা কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার কথা বলেন।
প্রসঙ্গত গত ২৪ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্ন ফাঁস রোধে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখার কথা বলেন। এরপর ২৫ জানুয়ারি তিনি আবারও বলেন, ‘আজ থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।’
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে কোচিং সেন্টার বন্ধ এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এবারে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান। তার মা রুকাইয়া জামান বলেন, যেকোনো উপায়ে হোক প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে হবে। কারণ দেশের কোথাও একটি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলে ওই পরীক্ষা বন্ধ হবে। এটি চাই না। কোচিং সেন্টার কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়েছে। ভালোই হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে