রায়েরবাজার: লাইনে পানি নেই তবু মিটারে বিল
১২ মে ২০১৯ ০৯:৫৪
ঢাকা: রমজানেও ওয়াসার পানি পাচ্ছেন না মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার ও তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, বছরের অধিকাংশ সময়ই চলে এই অবস্থা। তবে পানি না থাকলেও মাস শেষে ঠিকই পরিশোধ করতে হয় বিল। আর পানি না থাকার কথা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানালেই মেলে লাইন কেটে দেওয়ার হুমকি!
স্থানীয়রা জানান, বছরের অন্য সময়ের মতো রমজানের ৫ দিনেও মেলেনি ওয়াসার পানি। ফলে বাধ্য হয়েই রান্না ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে কেনা পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা।
তারা আরও জানান, কখনো কখনো পানি মিললেও তা দুর্গন্ধময় ও ময়লাযুক্ত। ফলে রমজানে রান্না-বান্না ও গোসল এবং অজুসহ প্রয়োজনীয় সব কাজের জন্য পানি কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। বারবার অভিযোগ জানিয়েও এর কোনো সমাধান মিলছে না।
সরেজমিনে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকার কাটাসুর, ফুলপাড়, সাদেক খান লেন, স্কুল রোড, নতুন রাস্তা, জাফরাবাদ, হোসাইন রোড, ফিজিক্যাল কলেজ রোড, দুর্গা মন্দির ও শেরেবাংলা রোড এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
বাসিন্দারা জানান, এলাকায় গত ১৫ দিন ধরেই পানের উপযুক্ত কোনো পানি ওয়াসায় মিলছে না। প্রথমে কয়েকদিন দুর্গন্ধযুক্ত আর সপ্তাহখানেক ধরে দুর্গন্ধময় পানির সঙ্গে ময়লাও পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ৫ দিন, অর্থাৎ প্রথম রোজার পর থেকে জাফরাবাদ ও ফুলপাড় এলাকায় পানিই মিলছে না।
ওয়াসার স্থানীয় পাম্প পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
জাফরাবাদ এলাকার ৯৩/এ বাড়ির কেয়ারটেকার বাবুল ফরাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম রোজার পর গত ৫ দিন ধরে লাইনে কোনো পানি আসেনি। সকাল-দুপুর-রাত সারাক্ষণ মোটর চালিয়ে দেখি পানি পাই কিনা। কিন্তু কোনো পানি আসে না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বাড়িওয়ালার বোনের বাড়ির থেকে পাইপ দিয়ে পানি এনে কোনরকমে ভাড়াটিয়াদের গোসল এবং রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করতেছি, কিন্তু এভাবে আর কতদিন।’
ওই বাড়িতে কিভাবে পানি থাকলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই বাড়ি হইলো লালমাটিয়া পাম্পের আওতায়। আর আমরা হইলাম রায়েরবাজার পাম্পের আওতায়। তাই পাশাপাশি বাড়ি হইলেও ওদের বাসায় পানি আছে, কিন্তু আমাদের বাসায় পানি নাই। পাম্পের লোকজনকে হাজারবার অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু এখনও সমাধান পাইনি।’
ফুলপাড় এলাকার ১০০/ডি বাড়ির কেয়ারটেকার মো. সাহেব আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে আমাদের এলাকার কোনো বাড়িতেই সময়মতো পানি পাওয়া যায় না। রাত দুইটার পর আধ/এক ঘণ্টার জন্য মাঝে মাঝে পানি আসে। তবে তাও ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা। রান্না তো দূরের কথা। গোসলও করা যায় না ওই পানিতে, শরীর চুলকায়। এলাকার বাসিন্দারা টাকা দিয়ে পানি কেনে এখন। আমরাও তিন হাজার লিটার পানি কিনি প্রতিদিন ৪০০ টাকা দিয়ে।’
দুর্গামন্দির এলাকার বাড়িওয়ালা রুহুল আমিন বলেন, “ওয়াসার পানি তো পাই না, উল্টো মাস শেষে বিলটা ঠিকই পরিশোধ করি। যদি বলি ঠিকমতো পানি পাই না, কিসের বিল দিবো। একথা বললে ওয়াসার উত্তর ‘তাইলে লাইন কেটে দিই’। এবার বুঝেন তারা পানি না দিলেও বিল ঠিকই নিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘তিন দিনে দেড় হাজার টাকার পানি কিনছি। ৫ হাজার লিটার এক গাড়ি পানি কিনতে হয় ৫০০ টাকায়। বাড়ির ১৫টি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া রয়েছে, নিরুপায় হয়ে তাই পানি কিনতেই হয়।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যদি ওয়াসার প্রতি একটু রহম করে তাইলে সমাধান হবে। রমজানে পানি না থাকলে মানুষের কত কষ্ট হয়, ওয়াসা যদি একটু বুঝতো তাহলে খুব দ্রুত সমস্যা সমাধান হইতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার পাম্প স্টেশনের এক কর্মচারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায়েরবাজার এলাকায় ওয়াসার দুটি পাম্প পানি সরবরাহ করে। তবে পাম্প সচল থাকলেও গরমে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া বাসিন্দাদের পানির চাহিদাও বেড়ে গেছে। এসব কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি সারাবাংলাকে আরও বলেন, ‘এলাকায় একেবারেই পানি যায় না এটা তো শুনিনি। তবে পানি সময়মতো যায় না এটা সত্য। কারণ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। আগে যেখানে প্রতি মিনিটে পানি উত্তোলন হতো ৩ হাজার লিটার, এখন সেখানে প্রতি মিনিটে তোলা হচ্ছে ২ হাজার লিটার। কিন্তু পানি কমে গেলেও চাহিদা উল্টো বেড়েছে। তাই পানির এ সংকট।’
তবে এ সমস্যার সমাধান কি সে বিষয়ে ওই কর্মচারী কিছু জানেন না। তিনি বলেন, ‘এটা বড় স্যারেরা বলতে পারবেন। আমি বলতে পারবো না।’
পানির সংকট সমাধানের বিষয়ে জানতে ওয়াসার মোডস জোন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম খানের লালমাটিয়া কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এমনকি বিষয় উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ওই কর্মকর্তা তার জবাব দেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার মো. আবু তাহের খান বলেন, গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে তার এলাকায় পানির তীব্র সংকট। এর আগেও মাঝে মাঝে পানি সংকট দেখা দিত। যে কারণে তিনি প্রায় ৬/৭ মাস আগে ওয়াসার এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এলাকায় আরও কয়েকটি পাম্প স্থাপনের অনুরোধ জানান। তবে কেউই বিষয়টি আমলে নেয়নি বলে তার অভিযোগ।
কমিশনার বলেন, ‘যেহেতু আমি জনগণের সেবক, জনগণ আমার কাছেই জবাবদিহিতা চায়। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ওয়াসাকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। আমি ওয়াসার কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন অন্তত রমজান মাসে মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবেও সমস্যাটির সমাধান করেন।’
সারাবাংলা/এসএইচ/এমও/এসএমএন