কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুদক
১২ মে ২০১৯ ১৩:৫২
ঢাকা: কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আসবাবপত্র কেনার মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম।
রোববার ( ১২ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা থাকলেও অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলম উপস্থিত না থাকায় বাকি পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
আরও পড়ুন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক
চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের আসবাবপত্র কেনার জন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। আরেক প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। কারণ এই আসবাবপত্র কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। আর সেই ফাইলে মহাপরিচালকসহ এই ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সই করেছেন। ফলে এখানে দুর্নীতি হয়েছে— সেটা স্পষ্ট।
দুদকের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে— জানতে চাইলে মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের অনুসন্ধান থেকে আমরা কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। এরপর কমিশন থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বিষয়ে আমার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমি যেন সহযোগিতা করি। আমি আগেও সহযোগিতা করেছি, এখনও করব। তখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগে যারা দায়িত্বরত ছিলেন, তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
একজন কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, আমরা তার বাড়িতেও খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববান হতে হবে। আর যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে, সেই দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। তবে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের যে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে, সেখানে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত শেষ না হলে নিশ্চিত করে বলাটা মুশকিল। এজন্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করছি। দুর্নীতি করলে কেউ রক্ষা পাবে না।
অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। যে অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে, তার সঙ্গেও আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে এর আগেও আবদুর রশীদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে দুদক। এবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কেন মামলা করেছে এবং এবার কেন আবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে— এ বিষয়ে দুদকই ভালো বলতে পারবে।
এর আগে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও সহকারী পরিচালক রতন কুমার পাল পর্যায়ক্রমে অধিদফতরের পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা হলেন— স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধিদফতরের চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস, উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক কামরুল কিবরিয়া ও প্রধান সহকারী আবদুল মালেক। অধিদফতরের উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলমকেও জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকরেও তিনি এদিন উপস্থিত হননি।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আসবাবপত্র কেনার জন্য ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকার প্রশাসনিক অনুমোদনসহ বরাদ্দ চান। কিন্তু এই আসবাবপত্র কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাওয়া প্রস্তাব সুপারিশসহ অগ্রবর্তী করা হয়। নথিতে ওই ছয়জন কর্মকর্তা–কর্মচারী সই করেন।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর