৫২টি পণ্য তুলে নিতে মাঠে নামবে কর্তৃপক্ষ, আদেশের অপেক্ষা
১৩ মে ২০১৯ ১৮:১৩
ঢাকা: হাইকোর্টের আদেশের কপি হাতে পেলেই বাজারে থাকা নিম্নমানের ৫২টি পণ্য তুলে নিতে মাঠে নামবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছেন সংস্থা দুটি।
তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাজার থেকে তাদের পণ্য তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাজার থেকে নিম্নমানের পণ্যগুলো তুলে নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হবে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা। সেই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট যায়গায় নিম্নমানের ওইসব পণ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট যায়গায় পণ্যগুলো ধ্বংস করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পণ্যগুলোর উৎপাদন বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সহায়তা চাইবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ।
এদিকে, হাইকোর্টের আদেশের একদিন পরই কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে তাদের পণ্য উঠিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএসটিআইয়ের মানে উত্তীর্ণ না হওয়া এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা আসা পর দুএকটি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে তাদের পণ্য উঠিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার (১৩ মে) রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু সারাবাংলাকে জানান, তীর তাদের সরিষার তেল ফেরত নিচ্ছে। যে পণ্যগুলো নিম্মমানের এবং বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা এসেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলেছে তারা তাদের পণ্য উঠিয়ে নেবে।
কারওয়ান বাজারের আনছার মাঝি স্টোরের আরেক দোকানী আব্দুস ছালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুষ্টি তাদের সরিষার তেল নিয়ে যাবে। যাদের সমস্যা আছে তারা নিয়ে যাবে।’ অন্য দোকানী মেসার্স এম আর ট্রেডার্সের প্রোপাইটার সেলিম আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি গ্রুপ এসেছিল। তারা তাদের সরিষার তেল উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমাদের জানিয়েছে। আর কোনো কোম্পানি এখনো আসেনি।’
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে তুলে এনে ধ্বংস করার হাইকোর্টের আদেশের কপি এখনো পাওয়া যায়নি। কপি হাতে পেলে ডিজি স্যার করণীয় ঠিক করতে মিটিং করবেন। এরপরই পণ্যগুলো তুলে আনার জন্য মাঠে নামা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই কাজ করতে অনেক জনবলের দরকার পড়বে, জনবল কিভাবে আসবে সেটিও ঠিক করা হচ্ছে। আর করণীয় নির্ধারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মাহফুজুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজার থেকে ৫২টি পণ্য প্রত্যাহার করে নিতে আমার কাজ শুরু করেছি। এর মূল দায়িত্ব কিন্তু বিএসটিআইয়ের। তারা ব্যর্থ হওয়ায় হাইকোর্ট আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলবো সেগুলো বাজার থেকে তুলে নিতে। একটা সময়সীমা দেওয়া হবে। সেই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি যায়গায় ওইসব পণ্য একত্রিত করতে বলা হবে। তারপর সেগুলো ধ্বংস করা হবে।’
আর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। মাঠে নামার জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন হাইকোর্টের আদেশের কপির জন্য অপেক্ষা করছি। কপি হাতে পেলেই নির্দেশনা অনুসরণ করে অভিযান শুরু করা হবে।’
কোম্পানিগুলো কারখানায় যেন এসব পণ্য উৎপাদন করতে না পারে সেজন্যও তো আপনাদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করছে আদেশের কপি হাতে পাওয়ার ওপর। সেখানে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই অভিযান চালানো হবে। কারখানা বন্ধ করতে বলা হলে তাই করা হবে।’
প্রসঙ্গত গত ১২ মে নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে তুলে এনে ধ্বংসের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে এসব পণ্যের উৎপাদন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় ওই ৫২টি পণ্য সম্পর্কে এ নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট।
সারাবাংলা/ইউজে/ইএইচটি/এমআই