প্রশাসনে পদোন্নতির প্রস্তুতি চলছে
১৩ মে ২০১৯ ২৩:৩৭
ঢাকা: প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শিগগিরই পদোন্নতি দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে চলছে কর্মব্যস্ততা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারে বিসিএস ক্যাডারের ১৭তম, ১১তম ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। নাম গোপন রাখার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদোন্নতি দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কয়েক দফা এসএসবি বোর্ডের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্রটি জানায়, সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে গ্রেড উন্নতিকরণের কার্যক্রমও চলছে। এরপরই শুরু হবে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব, যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া। সূত্রমতে, এবার চার শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। তবে জনপ্রশাসনে কর্মরত উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, এসব পদন্নেতি পর্যায়ক্রমে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারের টানা ১০ বছরের শাসনামলে জনপ্রশাসনের শীর্ষ চারটি পদে সাড়ে ৭ হাজার জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব এবং গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ পর্যন্ত উল্লিখিত পদোন্নতি দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ১৮৪ জনকে সচিব পদে, এক হাজার ১৩০ জনকে অতিরিক্ত সচিব, দুই হাজার ছয় জনকে যুগ্মসচিব, দুই হাজার ৩৭৩ জনকে উপসচিব এবং বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির মাধ্যমে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে এক হাজার ৯৬৬ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের গ্রেড-১ পদে ৯৩ জন, গ্রেড-২ পদে ৩৮৯ জন এবং গ্রেড-৩ পদে এক হাজার ৫৪১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সরকারি কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতির অধীনে প্রতিবছর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা কর্মচারীদের দুই ক্যাটাগরিতে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়। গত তিন বছরে জাতীয় পর্যায়ে ১৫ জনকে এবং জেলা পর্যায়ে ২৯ জনকে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ১১৪টি আইন বাংলায় প্রমিতকরণ হয়েছে।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৮ থেকে ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে ২৪ হাজার ৩৯১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩৭ থেকে ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে আরও ১০ হাজার ক্যাডারের শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়া চলমান। এর বাইরে গত ১০ বছরে সরকারি বিভিন্ন দফতর ও সংস্থায় নিয়োগের জন্য ৫৮ হাজার ৩১০টি ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পিএটিসি’র মাধ্যমে কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০০ জনকে বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ করিয়ে আনা হয়েছে।
ভালো কাজে পুরস্কার, মন্দ কাজে তিরস্কার
‘শুদ্ধাচার চর্চা পুরস্কার প্রদান নীতিমালা-২০১৭’ অনুযায়ী ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তি বা তিরস্কারের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে দাখিল করার সুযোগ আছে। সেবাগ্রহীতারা কোনো বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে সরাসরি লিখিত আকারে বা অনলাইনে যেকোনো স্থান থেকে অভিযোগ করতে পারেন। প্রাপ্ত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা’ অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবকে ‘অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে এই কর্মকর্তার নাম, মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর দেওয়া আছে। কর্মকর্তার কাছে আসা অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ছে।
মাঠ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সব স্তরের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়েরের মাধ্যমে লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্তের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিভিন্ন দফতরের ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮১ জনের বিরুদ্ধে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড, ১২ জনকে লঘুদণ্ড এবং ২২ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর