জনগণ যেভাবে ট্যাক্স দেয়, সেভাবে সুযোগ সুবিধা পায় না
১৫ মে ২০১৯ ১৬:১৮
ঢাকা: জনগণ যেভাবে ট্যাক্স দিচ্ছে, সেভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই, সব অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে সমস্যা সমাধান করতে দুই সিটির নির্বাহীদের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে জারি করা রুল শুনানিকালে বুধবার (১৫ মে) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান দুই নির্বাহীর ব্যাখ্যা শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে ব্যাখ্যা দিতে হাজির হয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল হাই এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজুল রহমান।
এসময় আদালত মশা, বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।
শুনানির সময় আদালত বলেন, ‘বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজের সময় আপনাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যায় কেন? আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করেন। এসব কাজ সমন্বিতভাবে করবেন। এছাড়াও, নাগরিক যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাও আপনারা নিশ্চিত করবেন। পয়:নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা ও মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
আদালত বলেন, ‘সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। একটু বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পানি উঠে যায়। আবার মশার উৎপাতও বেড়ে যায়। তাই আগামী বর্ষায় মশার উৎপাত কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বাংলাদেশে অনেক বিদেশি বসবাস করেন, বেশ কয়টি দূতাবাসও রয়েছে। দেশে বিনিয়োগের আরও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, সেগুলো লক্ষ্য রাখতে এবং সচেতন হয়ে আরও কর্মমুখী হতে হবে।’
আদালত আরও বলেন, জনগণ যেভাবে ট্যাক্স দিচ্ছেন তাতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাদের অধিকার। তাই, সব অনিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে অচিরেই সব সমস্যা সমাধান করতে দুই সিটির নির্বাহীদের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, দুই নির্বাহীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. নুরুন্নাহার নুপুর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, দুই সিটির নির্বাহীরা বুধবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে তারা কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের ব্যাখ্যা শুনে আদালত তাদেরকে বলেছেন, উন্নয়ন কাজের সময় সমন্বয়হীনভাবে বিভিন্ন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করেন। এ বিষয়ে তাদের নজর দিতে বলেছেন। নাগরিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির জন্য সিটি করপোরেশনের যে যে দায়িত্ব রয়েছে সেসব নিশ্চিত করতে বলেছেন আদালত।
তিনি বলেন, আজকে তারা যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তাতে আদালত খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলে আরও এক মাস সময় দিয়েছেন আদালত। যাতে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
আদালত আরও বলেছেন, জনগণ যেভাবে ট্যাক্স দিচ্ছেন, তাতে জনগনের যেভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে অনেকটাই হচ্ছে না। এ বিষয়ে ওনাদেরকে আরও বেশি মনোযোগী হতে বলেছেন আদালত। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে সেটিও নিরসনের কথা বলেছেন আদালত।
গত ৫ মে ঢাকার দুই সিটির প্রধান নির্বাহীকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বন্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুল জারির পাশাপাশি বায়ু দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে অন্তবর্তীকালীন আদেশও দেন। রাজধানীর যেসব এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে ১৫ দিনের মধ্যে সেসব এলাকা ঘেরাও করে পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওই আদেশ পালন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/জেএএম