আওয়ামী লীগের আগেই সহযোগীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তাগাদা
১৫ মে ২০১৯ ২১:৫৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগের স্বীকৃত সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে পাঁচটিরই কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ নেই। কয়েকটি কমিটি চলছে সাত বছর ধরে। এদিকে, আসছে অক্টোবরেই দলের জাতীয় সম্মেলন আয়োজনে চলছে জোর প্রস্তুতি। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের তাগাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক সূত্র সারাবাংলাকে বলছে, অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনের পাশাপাশি বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজন। জাতীয় সম্মেলনের আগেই যেন এসব সংগঠনের সম্মেলন আয়োজিত হয়, বৈঠক থেকে সে বিষয়ে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
মঙ্গলবারের যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা স্পষ্ট করেন। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢেলে সাজিয়ে জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে পারব।’
সভায় সহযোগী সংগঠনগুলোকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে হানিফ আরও বলেন, আমাদের যেসব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আছে, যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, তাদেরও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার জন্য সভা থেকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যেন তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করতে পারে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের যৌথসভায় উপস্থিত সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠেনের সম্মেলনের বিষয়ে শেখ হাসিনা নিজেই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানানো হয় বৈঠকে। তার নির্দেশনা অনুযায়ীই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হানিফ এসব সংগঠনকে সম্মেলন করার করার তাগাদা দেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্রটি আরও জানায়, এসময় সভায় উপস্থিত সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানতে চান, কবে নাগাদ তাদের সম্মেলন করতে হবে। এর উত্তরে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আপা (শেখ হাসিনা) জাতীয় সম্মেলনের আগেই আপনাদের সম্মেলন করার কথা বলেছেন।’
সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিমদের মেয়াদ নেই যাদের
তিন বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে যুবলীগের চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন হারুন অর রশিদ। এদিকে, ওই বছরেরই ১১ জুলাই মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই হিসাবে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ এসব কমিটি টিকে আছে সাত বছর ধরে।
একই অবস্থা সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগেরও। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে কৃষক লীগের কমিটি ঘোষণা হয়। একই অবস্থা জাতীয় শ্রমিক লীগেরও। সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক লীগের কমিটির মেয়াদও নির্ধারিত সময়ের কয়েকবছর পেরিয়ে গেছে।
এর বাইরে, ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ ও ১৯ মার্চ তাঁতী লীগ— আওয়ামী লীগের এই তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২৯ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সংগঠনটি পরে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ওই বছরের ২১ মে এর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে সংগঠনটিরও কেন্দ্রীয় সম্মেলন আর আয়োজন করা হয়নি।
এর বাইরে গত বছরের জুলাইয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর গত সোমবার (১৩ মে) ঘোষণা করা হয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ হিসাবে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম হিসেবে স্বীকৃত ৯ সংগঠনের মধ্যে পাঁচটিরই কেন্দ্রীয় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর