আখ চাষিদের ২২৫ কোটি টাকা পাওনা দিচ্ছে না ১৫ চিনিকল
১৬ মে ২০১৯ ১০:২৩
ঢাকা: চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন ১৫ চিনিকলের কাছে আখ চাষিদের ২২৫ কোটি টাকা পাওনা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এই পাওনা পরিশোধ করছে না চিনিকলগুলো। যে কারণে সরকার নিয়ন্ত্রিত এসব চিনিকল নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। তবে কলগুলো বলছে, উৎপাদিত চিনি বিক্রি করতে না পারায় এই দৈন্যদশা তৈরি হয়েছে। চিনি বিক্রি হলেই টাকা পরিশোধ করা হবে।
জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার (১৫ মে) অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে কৃষকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন কমিটির সদস্যরাও। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, চিনি বিক্রি হলো কি হলো না, সেটি কৃষকদের দেখার বিষয় নয়। পরিশ্রম করে তারা পারিশ্রমিকের টাকা পাবেন না কেন? কলগুলো নিম্নমানের চিনি উৎপাদন করছে বলেও বেশ কয়েকজন সদস্য বৈঠকে অভিযোগ করেন।
আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি সমস্যা উত্তরণে মানসম্মত চিনি উৎপাদনের সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে চিনি শিল্পের বিকাশে করণীয় নির্ধারণে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে মন্ত্রণালয়কে কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, টাকার অভাবে চাষিদের কাছ থেকে কেনা আখের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না করপোরেশনের ১৫টি চিনিকল। চিনি কলগুলোর কাছে আখ চাষিদের আখের মূল্য বাবদ চাষিদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। এদিকে, উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় মিলগুলো আরও বিপাকে পড়েছে। তাই কমিটি গুণগত মানসম্পন্ন চিনি উৎপাদনের সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে কমিটি চিনির মিলগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা যথাসময়ে পরিশোধ করারও সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি।
আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, মো. মাহবুবউল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুল হাকিম, মুহিবুর রহমান মানিক এবং বিশেষ আমন্ত্রণে মো. মজাহারুল হক প্রধান অংশ নেন। বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোশনের অধীন সচল চিনিকলগুলোর বার্ষিক উৎপাদন, আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসান ও ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন সচল চিনিকলগুলোর বিদ্যমান বিভিন্ন অডিট আপত্তি এবং কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এসময় বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি মিল এবং রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি মিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যথাক্রমে ৫ কোটি ৫০ লাখ ৭২ হাজার টাকা ও এক কোটি ৬ লাখ ১১ হাজার টাকা লাভ করে। বৈঠকে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অডিট আপত্তিগুলোর বিষয়ে অবহিত করা হয়। জানানো হয়, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট বাণিজিক অডিট আপত্তির সংখ্যা ১ হাজার ৬২৪টি, সাধারণ আপত্তির সংখ্যা ৬৫২টি, অগ্রিম আপত্তির সংখ্যা ৯১৭টি, খসড়া আপত্তির সংখ্যা ১০টি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর