আস্থা অর্জনে ‘ব্যর্থ’ দুদক
১৭ মে ২০১৯ ১২:১৩
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কমেছে দায়ের করা মামলার সংখ্যা। এমনকি কমেছে আসামী গ্রেফতারের সংখ্যা, গণশুনানীর সংখ্যা, অভিযোগপত্রের সংখ্যা ও সাজার হারও। ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এমন চিত্র উঠে এসেছে। তাই, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে দুদক। যে কারণে পিছিয়ে পড়ছে দুদক।
২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কমিশন মামলা দায়ের করেছে ৩৫৯টি, ২০১৭ সালে ২৭৩টি আর ২০১৮ সালে মামলা হয়েছে ২১৬টি। ফলে মামলা দায়েরের হার কমেছে। অন্যদিকে কমিশনের চার্জশিট অনুমোদনের হারও কমেছে। ২০১৬ সালে ৫৩৫টি, ২০১৭ সালে ৩৮২টি আর ২০১৮ সালে ২৩৬টি চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ফাঁদ মামলার সংখ্যাও কমেছে। ২০১৪ সালে ৫টি, ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৬ সালে ১৩টি, ২০১৭ সালে ২৪টি আর ২০১৮ সালে ১৫টি ফাঁদ মামলা করা হয়েছে। এছাড়া, মামলায় সাজার হারও কমেছে। ২০১৫ সালে দুদকের মামলায় সাজার হার ছিলো ৩৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৫৪ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ শতাংশ আর ২০১৮ সালে মামলায় সাজার হার ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ মামলায় সাজার হারও ৫ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১৫ সালে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন গণশুনানি করেছে ৫টি, ২০১৬ সালে ৩০টি, ২০১৭ সালে ৪০টি আর ২০১৮ সালে ২৭টি। ফলে গণশুনানীর সংখ্যাও কমেছে। একই সাথে ২০১৬ সালে দুদক গ্রেফতার করেছে ৩৮৮জন, ২০১৭ সালে ১৮২জন আর ২০১৮ সালে মাত্র ৫৭ জনকে। অর্থাৎ আসামী গ্রেফতারের হারও কমেছে।
দুদকের সফলতা ব্যর্থতার প্রশ্নে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সারাবাংলাকে বলেন, দুদকের ২০১৮ সালে মামলা দায়েরের হার ও সফলতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে কমিশন। চার্জশিট অনুমোদনের হারও কম। সব মিলিয়ে পরিশেষে এটাই লক্ষ্যনীয় দুদকের ব্যর্থতারই পরিচয় বহন করে। তবে, দুদক চাইলে ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে সফলতা অর্জন করে আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য দরকার বড়বড় কয়েকজন দুর্নীকিবাজকে আটক করা। তাহলেই সফলতা অর্জনে আরও এগিয়ে যাবে কমিশন। তবে, এগুলোতে পিছিয়ে যাওয়া মানেও কিন্তু জনগণের আস্থার জায়গাটা নষ্ট হওয়া বা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে দুদক। বলা যায়, জনগণের আস্থা অর্জনে দুদক ব্যর্থ হচ্ছে। কেননা কমিশন উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরছে না। এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এছাড়া, মামলার সংখ্যা নয় কাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করছে সেটা দেখার বিষয়। চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে মামলা করে সফলতা অর্জন আর রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে মামলা করা এক নয়। এছাড়া, দুদকের প্রতিকারমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা কম। ফলে, সবদিকে দুদকের অর্জন না থাকলে সফলতা আসবে না।
দুদকের সাবেক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, সাদা চোখে আমি দুদকের ব্যর্থতা দেখছি। দুদকের বর্তমান কর্মকাণ্ড, পরিধি, বিদ্যমান সক্ষমতা সেটা দুদকের কমিশন ভালো বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি, বর্তমান কমিশন চেষ্টা করলে দুদকের সফলতা আরও বাড়বে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও কঠোর হতে হবে। নমনীয়তা কখনো দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে না। এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মামলা, চাজর্শিটসহ অনেক ক্ষেত্রে দুদকের সফলতার হার কম। আমি এটাকে ভালো চোখে দেখছি না। তবে, আমি বিশ্বাস করি কমিশন চাইলে সফলতা অর্জন আরও বেশি বেশি সম্ভব।
এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, সফলতা কিংবা ব্যর্থতার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এখন সবাই দুদককে চেনে। ২০১৮ সালে মামলার সংখ্যা, আসামী গ্রেফতারের সংখ্যা, গণশুনানীর সংখ্যা, অভিযোগপত্রের সংখ্যা, মামলায় সাজার হার কম হয়েছে। আমরা চার্জশিটে সময় নিয়েছি কারণ চাজর্শিটে আসামির শতভাগ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা সময় নিয়ে কাজ করেছি। এটাকে সফলতা বা ব্যর্থতা হিসেবে ধরলে কাজ করা যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে থাকলে সামনে আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারব।
সারাবাংলা/এসজে/জেএএম