দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই মান্নাকে প্রস্তাব
১৯ মে ২০১৯ ২০:৫৫
ঢাকা: দলীয় ফোরামে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে বগুড়া-৬ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে আসা এই প্রস্তাব মান্নাকে পৌঁছে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য’র সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মধ্যম সারির নেতারাও মান্নাকে দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু জানেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটি চায় এরই মধ্যে শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়া বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্যের সঙ্গে এমন একজন যোগ হোক, যিনি সংসদে কড়া ভাষায় সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে পারবেন। পাশাপাশি বিএনপির পক্ষে শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে পারবেন সংসদে।
কিন্তু এ আসনটিত খালেদা জিয়া একাধিকবার জয়ী হওয়ায় এটিকে তার আসন হিসেবেই দেখে বিএনপি। তাই এ আসনের উপনির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করার ভার যথারীতি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার এই আসনটি জোট শরিকদের ছেড়ে না দিয়ে বিএনপির একজনকেই প্রার্থী করতে চান তারেক রহমান। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কৌশলগত কারণে ছেড়ে দেওয়া আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বা প্রবীণ কোনো নেতাকে প্রার্থী করতে চান না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সে কারণেই বগুড়ার সন্তান নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দলে ভিড়িয়ে প্রার্থী করার কথা ভাবছিলেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের কারও সঙ্গে আলাপ না করেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন দিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানান তারেক রহমান। চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যাওয়ার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মান্নাকে পৌঁছে দেন তারেকের প্রস্তাব।
কিন্তু এই প্রস্তাব সম্পর্কে বিএনপির শীর্ষ নেতারা কিছুই জানেন না। অবশ্য তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া এই প্রস্তাবের বিরোধিতাও করছেন না কেউ। তবে ভেতরে ভেতরে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান রোববার (১৯ মে) দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি।’
‘তাছাড়া তিনি (মাহমুদুর রহমান মান্না) একটা দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও আছেন। তিনি তার দল ছেড়ে বিএনপিতে আসবেন কেন?’— বলেন ড. মঈন খান।
এদিকে আগবাড়িয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও মান্না সে প্রস্তাবে রাজি হননি। বরং তিনি বিস্মিত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। কোনো রাখঢাক না করেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার ফোনালাপের বিষয়টি খোলাখুলি বলে দিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
তার ভাষায়, ‘সপ্তাহখানেক আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আমাকে জানান, লন্ডন থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি বগুড়ায় নির্বাচন করব কি না? করলে বিএনপির হয়ে করতে হবে। তখন আমি জানতে চাই, বিএনপির হয়ে মানে কী, বিএনপিতে যোগ দিয়ে? জবাবে ফখরুল সহাস্যে বলেন, এর মানে তো তা–ই হয়।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিতে যোগ দিয়ে নয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবেন মান্না।সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য তিন শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং গণফোরামের শীর্ষ নেতাদের সম্মতি লাগবে।
জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপিতে যোগ দিয়ে বগুড়া উপনির্বাচনে করার প্রসঙ্গটা একেবারেই ইউজলেস। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’
উল্লেখ্য, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় জাতীয় সংসদের বগুড়া-৬ আসনটি শূন্য হয়। আগামী ২৪ জুন এ আসনে উপনির্বাচন।
সারাবাংলা/এজেড/জেডএফ