মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল, পাত্তা দিচ্ছে না হুয়াওয়ে
২১ মে ২০১৯ ১৭:৩১
চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে মার্কিন সরকার। তবে তাতে কিছু যায় আসে না বলে মনে করছে কোম্পানিটি। হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই বলছেন, তারা মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। বরং মার্কিনিরাই হুয়াওয়ের সক্ষমতা ‘খাটো করে’ দেখেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
রয়টার্স ও বিবিসির খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য কিনতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি— এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত।
আরও পড়ুন- হুয়াওয়েই ফোনে ম্যাপস ও ইউটিউবসহ কিছু সুবিধা সীমিত করল গুগল
যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এমন একটি সময় যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের পণ্যগুলোর ওপর যখন বাড়তি শুল্ক আরোপ করে চলেছে। দুই দেশের মধ্যে দরকষাকষি চলার সময় চীন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, এমন অভিযোগও আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে হুয়াওয়ের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু কিনতে হলে হুয়াওয়েকে বিশেষ লাইসেন্স পেতে হবে। সপ্তাহ না পেরোতেই সোমবার মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে হুয়াওয়েকে। কোম্পানিটি যেন তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে পারে এবং তাদের স্মার্টফোনগুলোতে সফটওয়্যার আপডেট দিয়ে যেতে পারে, সে জন্য আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন পণ্য কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই লাইসেন্সে। তবে নতুন পণ্য উৎপাদনের জন্য আমেরিকায় উৎপাদিত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনার অনুমতি এখনো তাদের দেওয়া হয়নি।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলেন, হুয়াওয়ের মোবাইল ফোন ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে হুয়াওয়েকে এই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার আগেই অবশ্য সোমবার হুয়াওয়ে থেকে নিজেদের বেশকিছু সেবা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় গুগল। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের পাশাপাশি ইউটিউব, গুগল ম্যাপসের মতো বেশকিছু অ্যাপও হুয়াওয়ে’র জন্য ব্লক করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় গুগল। হুয়াওয়ের জন্য এটি বড় ধরনের আঘাত বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
এদিকে, মার্কিন সরকার ও গুগলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় হুয়াওয়ে বিপাকে পড়ছে মনে করলেও তেমন ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই। মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তারা এমন ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
রেন ঝেংফেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আমাদের সক্ষমতাকে খাটো করে দেখছে, তাদের কর্মকাণ্ড সেটিই প্রমাণ করে। আমরা অনেক আগে থেকেই এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
হুয়াওয়ের এই প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, যা কিছুই করা হোক না কেন, ফাইভজি প্রযুক্তিতে হুয়াওয়েকে কেউ ছুঁতে পারবে না।
হুয়াওয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা অবশ্য নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ করে আসছে দেশটি। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ব্যাংক জালিয়াতি, আইন প্রয়োগে বাধা দেওয়া ও প্রযুক্তি কৌশল চুরিসহ ২৩টি অপরাধে হুয়াওয়ে ও কোম্পানিটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝৌ‘র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পরে মেং ওয়ানঝৌকে গ্রেফতার করা হয় কানাডা থেকে।
পরে অবশ্য হুয়াওয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে। মেং ওয়ানঝৌ‘র কোনো অপরাধ সম্পর্কেও তারা অবহিত নয় বলে দাবি করে। শুধু তাই নয়, গেল মার্চে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করে চীনের এই টেলিকম জায়ান্ট।
সারাবাংলা/টিআর