আজও ক্ষতিপূরণ দেয়নি গ্রিনলাইন, আদালতের ক্ষোভ
২২ মে ২০১৯ ১২:০৯
ঢাকা: আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা পরিশোধ না করায় গ্রিনলাইন পরিবহনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেট কারের চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দিতে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেবেন বলেও জানিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২২ মে) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আরও পড়ুন- রাসেলকে আরও টাকা দিন, নইলে কী করতে হবে তা আমরা জানি: হাইকোর্ট
এর আগে, রাসেলের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধের আদেশ দেন গ্রিনলাইন পরিবহনকে। আদালতের একাধিক তাগাদার পর গত ১০ এপ্রিল ক্ষতিপূরণের ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছিল গ্রিনলাইন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য ২২ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আদালত।
আদালতের নির্ধারিত আজকের তারিখ পর্যন্তও ক্ষতিপূরণের বাকি টাকার কিছুই পরিশোধ করেনি গ্রিনলাইন। এ বিষয়ে আদালতের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করেনি তারা। আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রিনলাইন ক্ষতিপূরণের এই টাকা পরিশোধ না করায় তাতে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ জানিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আদালতের উদারতাকে দুর্বলতা হিসেবে নেবেন না।’
আরও পড়ুন: ৫ লাখ টাকা পেল রাসেল, বাকি টাকা একমাসের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ
পরে আদালত রাসেল সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা পরিশোধের জন্য গ্রিনলাইন পরিবহনকে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। আদালত আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবেন।
বুধবার শুনানির শুরুতেই গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অজিউল্লাহকে আদালত বলেন, আমাদের আদেশের কী বাস্তবায়ন করেছেন? জবাবে আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেন, ২০ মে থেকে গ্রিনলাইন পরিহন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই আমি নিজেকে এই মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পরে রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজাকে সামনে ডেকে আদালত জানতে চান, এ পর্যন্ত রাসেলের চিকিৎসায় গ্রিনলাইন কী দিয়েছে? আইনজীবী রেজা জানান, গ্রিনলাইন চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। এর আগে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে। তারপর যে বাকি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ ছিল, সে বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিনলাইনের সব বাস জব্দ, ম্যানেজারকে তলব
আদালত বলেন, রাসেল কি এখন হাঁটাচলা করতে পারে? তার আইনজীবী বলেন, কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে, এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে পারে। এসময় আইনজীবী পেছনে সাঁড়িতে বসা রাসেলকে সামনে ডাকেন। রাসেল ক্র্যাচে ভর করে সামনে আসেন।
রাসেলের আইনজীবী এসময় আদালতকে বলেন, আমার যা মনে হয়, তারা ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে। তখন আদালত বলেন, যারা ব্যবসা করবে, তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। সবকিছু তো আর আদালতের আদেশ দিয়ে হয় না। আমাদের কারও প্রতি কোনো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে গ্রিনলাইনের আচরণ ভালো লাগেনি। আমরা কঠোর হতে চাই না। কিন্তু আমাদের বাধ্য করবেন না কঠোর হতে। আমাদের নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কারণ নেই। এরপর যা করার তাই করব।
আদালত আরও বলেন, যেহেতু আজ গ্রিনলাইনের আইনজীবী বললেন যে তিনি নিজেকে এ মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন এবং আজ আদালতে গ্রিনলাইনের কেউ নেই, তাই আজ আমরা কোনো আদেশ দিচ্ছি না। আমরা এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন নির্ধারণ করছি।
পরে রাসেল সরকারের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা সাংবাদিকদের বলেন, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। আজ তাদের ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগই করেনি। এতে আদালত গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ জানিয়েছেন।
২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
ওই বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শঙ্কায় পড়ে তার জীবন।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা পা হারানো রাসেল সরকার রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে থাকতেন। তিনি স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন।
আরও পড়ুন-
রাসেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে আরও ৭ দিন সময় পেল গ্রিনলাইন
দুপুরের মধ্যেই রাসেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রিনলাইন মালিককে নির্দেশ
সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর