Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টিকিটের প্রত্যাশায় স্টেশনে ভিড়, নানা অনিয়মের অভিযোগ


২২ মে ২০১৯ ১৩:১৭

ঢাকা: কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এখন লোকে লোকারণ্য। শুধু কমলাপুর কেন, রাজধানীর বিমানবন্দর, বনানী, তেজগাঁও আর ফুলবাড়ীয় রেলস্টেশনের চিত্রও একই। কারণ এদিন থেকেই যে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের আগে ঘোষণা অনুযায়ীই, বুধবার (২২ মে) সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর পাঁচ রেল স্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ঈদে বাড়ি ফিরতে আগ্রহী মানুষ টিকিটের আশায় অবশ্য মঙ্গলবার (২১ মে) রাত থেকেই ভিড় করতে শুরু করেন স্টেশনগুলোতে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের সারি। সবারই আশা, কাঙ্ক্ষিত টিকিট নিয়ে ফিরতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- কমলাপুর টিকিটিং সিস্টেমের সার্ভার রুমে দুদকের অভিযান

টিকিট কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা গেল যাত্রী চাহিদার কারণে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মে মাসের ৩০ ও ৩১ তারিখের টিকিট। জুনের ৫ তারিখে ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরেই মূলত বাড়িতে যাচ্ছেন যাত্রীরা।

এবার কমলাপুরের মোট ২০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ নম্বর কাউন্টারের সামনে টিকিটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা খুলনার হাসমত আহমেদ বলেন, ‘গতকাল ভোর থেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছি। বিরক্ত হচ্ছি, তবে টিকিট পাবো ভেবে আনন্দও হচ্ছে। সুন্দরবন কিংবা চিত্রা এক্সপ্রেসে বসে বাড়ি যাব, একবছর পর মায়ের সঙ্গে হবে দেখা। স্বর্গীয় এই আনন্দের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হতে সামান্য কষ্ট তো করাই যায়!’

ছয় নম্বর কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়ে গেছেন রাজশাহীর খালেদ হাসান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থী কেটেছেন ৩১ তারিখের টিকিট। সকাল ৭টায় যখন তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তখন তার সামনে ছিল আরও ১০০ জন টিকিটপ্রত্যাশী। নিজেকে যখন লাইনের একদম শুরুতে আবিষ্কার করলেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১১টা।

বিজ্ঞাপন

এত সহজে টিকিট পেয়ে যাওয়ায় দারুণ খুশি খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া অনেক গোছানো। গত বছরের তুলনায় অল্প কষ্টতেই টিকিট পেয়ে গেলাম। এবছর নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো, বিষয়টি ভালো লেগেছে।’

তবে খালেদের বিপরীত মতও রয়েছে অনেক। মাঝরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সময়মতো টিকিট না পাওয়া, বুকিং সহকারীদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, ‘বিশেষ’ মানুষদের নিয়ম ভেঙে টিকিট দিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।

কুষ্টিয়ার মারুফ বলেন, ‘আমরা সাধারণ জনগণ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু অনেককে দেখি সারি ভেঙে টিকিট নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বুকিং সহকারীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উল্টো রাগ করছেন। ঈদের আগে টিকিট বিক্রির সময় এসব ব্যাপার খেয়াল রাখা জরুরি। আমরা সাধারণ মানুষ, তবে আমাদের সময়েরও মূল্য আছে।’

মেয়েকে টিকিট দেননি রেলমন্ত্রী, অনুরোধ রাখছেন না পিএসও

নাটোরের টিকিট প্রত্যাশী জান্নাতুল ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বুকিং সহকারীরা নিয়ম মানলে এই ভিড় আরও কমে যাবে। তাদের আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। তাহলে টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়াটি আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে লোকজন।

তবে অনিয়মের বিষয়গুলো অস্বীকার করেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. আমিনুল হক। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের চাপ সামলানো খুব কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। অনেকে খুশি হচ্ছেন, অনেকে রাগ করছেন। আমরা চেষ্টা করছি যেন সবাইকেই খুশি করে টিকিট দেওয়া যায়। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে বুকিং সহকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

টিকিট থাকলে যাত্রীরা টিকিট পাবেন জানিয়ে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, ‘ঈদের সময় সবার চাহিদা থাকে, কিন্তু আমাদের আসন সীমিত। আমাদের সক্ষমতা থাকলে কাউকেই খালি হাতে ফিরে যেতে দিতাম না। ঈদের সময় লোকজনকে খালি হাতে ফেরাতে আমাদের মন খারাপ হয়।’

এ বছর অঞ্চলভেদে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ পাঁচটি স্থান থেকে দেওয়া হচ্ছে ঈদের অগ্রিম টিকিট। ঢাকার কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকিট, বনানী থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের টিকিট ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে।

রেল মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২২ মে দেওয়া হচ্ছে ৩১ মের টিকিট, ২৩ মে ১ জুনের, ২৪ মে ২ জুনের, ২৫ মে ৩ জুনের এবং ২৬ মে ৪ জুনের আগাম টিকিট বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া আগামী ২৯ মে ৭ জুনের, ৩০ মে ৮ জুনের, ৩১ মে ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের ও ২ জুন ১১ জুনের ফিরতি টিকিট বিক্রি হবে।

এবার টিকিটের ৫০ ভাগ দেওয়া হচ্ছে অনলাইন অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে। রেলসেবা নামের অ্যাপ থেকে টিকিট কাটা যাবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

ঈদে এবার আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন মিলিয়ে সারাদেশে প্রতিদিন দেড় লাখ টিকিট বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে দুটি নতুন ট্রেন যুক্ত হয়েছে। একটি বনলতা এক্সপ্রেস অন্যটি পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেন।

সারাবাংলা/টিএস/এসএমএন

ঈদ টিকিট ঈদযাত্রা কমলাপুর রেল স্টেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর