‘সাড়া দিয়েছেন সিমলা’
২৩ মে ২০১৯ ১১:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ছিনতাই চেষ্টার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রায় তিনমাস চেষ্টার পর চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। বর্তমানে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থান করা সিমলা দেশে ফেরার পর সিটিটিসির মুখোমুখি হবেন বলেও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আশ্বস্ত করেছেন।
সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনমাস ধরে বিভিন্নভাবে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। বাড়ির ঠিকানায় নোটিশও পাঠানো হয়েছে। উনার (সিমলা) মা, ভাই ও বড় বোনের মাধ্যমেও যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এতোদিন তিনি (সিমলা) সাড়া দেননি। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি টেলিফোন রিসিভ করে আমার সঙ্গে কথা বলেন।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর পলাশ আহমেদ নামে এক যাত্রী ফ্লাইটটি ‘ছিনতাইয়ের উদ্দেশে’ বিভিন্ন ঘটনা ঘটান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর সন্ধ্যার দিকে মাত্র ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ এবং এই ছিনতাই কাণ্ডের অবসান ঘটে।
এই ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রযুক্তি সহকারি দেবব্রত সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তদন্তে নেমে শুরুতেই স্ত্রী সিমলার সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরে পলাশ ফ্লাইট ছিনতাই চেষ্টার মতো ঘটনার অবতারণা করেন বলে তথ্য পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে পলাশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন বলেও তথ্য পাওয়া যায়। তদন্তে পাওয়া যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে পলাশের বিয়ে হয় এবং একই বছরের ৬ নভেম্বর তাদের বিচ্ছেদ হয়।
এরপর কয়েক দফা সিমলার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশে তার অবস্থানের কোনো তথ্য না পেয়ে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় বাবার বাড়ির ঠিকানায় তাকে হাজিরের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনমাসেও সাড়া না পেয়ে সিমলার বড় বোনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বার্তা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। একইসঙ্গে দ্বিতীয় দফা নোটিশও পাঠানো হয়। এরপর সিমলা’র আগ্রহেই তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তদন্তকারী কর্মকর্তার।
পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিমলা জানিয়েছেন- তিনি এখন শ্যুটিংয়ের কাজে মুম্বাইয়ে আছেন। ঈদ পর্যন্ত তিনি খুবই ব্যস্ত সময় পার করবেন। এরপর দেশে ফিরবেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টারের টেরোরিজম ইউনিটে আসবেন বলে জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে যে কোনো তথ্য দিতে তার কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন।’
রাজেশ সারাবাংলাকে জানান, মামলায় পাইলট, ফার্স্ট অফিসার, কেবিন ক্রু, বিমানবন্দরের কর্মকর্তাসহ ১৮ জনকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই ফ্লাইটের ৩৫ যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তার সন্ধান পাবার চেষ্টা চলছে। সিমলার পাশাপাশি পলাশ আহমেদের আগের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পলাশের বাবা আগামী সপ্তাহে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে আসবেন।
সিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে মামলার তদন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আসবে। সাক্ষ্যপ্রমাণে এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বা তাদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। আর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া না গেলে এবং জড়িত একমাত্র ব্যক্তি মারা যাওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।’
কমান্ডো অভিযান নিহত পলাশ আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০১২-এর ৬ ধারা এবং বিমান নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ দমন আইন, ১৯৯৭-এর ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় পলাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলায় নিহত পলাশ আহমেদ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ওই উড়োজাহাজ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল ও বিস্ফোরকসদৃশ বস্তুসহ বেশকিছু আলামত জমা দেয় র্যাব ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম।
গত ১৩ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে। এতে বলা হয়, পিস্তলটি ছিল খেলনা।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন