রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি’র সক্রিয় ভূমিকা চায় ঢাকা
২৪ মে ২০১৯ ০৮:২০
ঢাকা: আগামী ৩১ মে সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠেয় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের একাধিক সংকট নিরসনে একটি ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। ঢাকা চায়, ওই ইশতেহারে দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করা হোক রোহিঙ্গা সংকট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, আসন্ন ওআইসি সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তিনি সম্মেলনের বক্তৃতা পর্বে বিশ্বের একাধিক সংকট নিরসনে দিকনির্দেশনা মূলক ভাষণ দেবেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বিশ্বে কী ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিষয়টি তুলে ধরে এই সংকট সমাধানে সবার সহায়তা চাইবেন।
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢাকার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি নেপিডো
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শীর্ষ সম্মেলন শেষে ওআইসি একটি ইশতেহার প্রকাশ করবে। ঢাকার পক্ষ থেকে শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে, যেন ওআইসির ইশতেহারে রোহিঙ্গা সংকটকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে, ঢাকা-রিয়াদ কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতিকালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যে পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে তাতে মধ্যপ্রাচ্যে এখন যুদ্ধের আতঙ্ক বিরাজ করছে। উভয় পক্ষই যুদ্ধ পরিহারের কথা বললেও সবাই যার যার সামরিক শক্তির সমাবেশ ঘটাচ্ছে। এমন অবস্থায় সৌদি বাদশাহ সালমান আরব লীগ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট জিসিসি সদস্যদের আগামী ৩০ মে মক্কায় এক জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন। যার একদির পরই ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন।
রিয়াদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমুদ্র সীমায় অবস্থান করা সৌদি আরবের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা ও সৌদি আরবের দুটি তেল ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে রিয়াদ মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তাই আরব লীগ ও জিসিসি সদস্যদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সৌদি যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান গত শনিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এমন অবস্থায় ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে শেষে প্রকাশ করা ইশতেহারে রোহিঙ্গা সংকট কতটুকু গুরুত্ব পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ান আরও সম্পৃক্ত হবে: মারসুদিও
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় তার বিরুদ্ধে বিচার নিশ্চিতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি। গত ৩ মার্চ (রোববার) আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসির ৪৬তম পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলের চূড়ান্ত অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে এবং মিয়ানমারের রাখাইনে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিজে) সঙ্গে কাজ করবে ওআইসি।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকার পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য চলতি বছরের প্রথমার্ধে সম্মতি জানিয়েছে ওআইসি। পাশাপাশি এই ইস্যুতে ওআইসি যেন বাংলাদেশের পক্ষে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখে, সেজন্য নিয়মিত কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে ঢাকা। তাই ঢাকার কূটনীতিকরা আশা করছেন, ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষণা করা ইশতেহারে রোহিঙ্গা ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
ওআইসির সদর দফতর থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, এবারের শীর্ষ সম্মেলনে ‘মক্কা ঘোষণা (মক্কা ডিক্লেয়ারেশন)’ শীর্ষক ইশতেহারে মুসলিম বিশ্বের সকল সংকট চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। ইশতেহারে প্যালেস্টাইন সংকট, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ইসলাম সম্পর্কে ভীতি (ইসলামোফবিয়া), সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
এর আগে, সবশেষ ১৩তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই