আদালত স্থানান্তরে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে রিটের শুনানি ১০ জুন
২৮ মে ২০১৯ ১৩:০৩
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য ঢাকা সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে করা রিটের পরবর্তী শুনানি ১০ জুন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৮ মে) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে আদালত কিছু বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীর কাছে প্রশ্ন রাখেন। সেসব প্রশ্নের জবাব দিতে সময় চান তার আইনজীবীরা। পরে আদালত ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, নওশাদ জমির, কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নাইকো মামলা ২০০৭ সালে শুরু হয়, তখনকার তথাকথিত অবৈধ একটি সরকারের অধীনে। দুটি মামলা হয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তার সময়েই কিন্তু নাইকো চুক্তিটা সম্পাদিত হয়, তখনই সবকিছু শুরু হয়।
সরকারের ২৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দুটি মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির জন্য সাবেক মানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, আর ১৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।
আমরা ওই সরকারের ধারাবাহিকতায় তারা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেই সিদ্ধান্তটিই আমরা বলবৎ রেখেছিলাম। এটাই হল আমাদের অপরাধ।’
মওদুদ বলেন, ‘আজ সেই মামলা স্থানান্তর নিয়ে রিটের শুনানি হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি করেছেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলও দাঁড়িয়েছেন। উনি বিরোধিতাও করেছেন কিছু বিষয়ের। কিন্তু এই পিটিশনের মধ্যে আদালত আরও কিছু জানতে চেয়েছে। সেগুলো এই আবেদনের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে হলফনামা আকারে দেওয়া হবে। সেজন্য আজকের মত শুনানি মুলতবি হয়েছে। বন্ধের পর ১০ জুন এই মামলার শুনানি আবার হবে।’
শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, কেরানীগঞ্জ ঢাকা মহানগর এলকার মধ্যে নয়। এটা মেট্রোপলিটন আদালতের এখতিয়ারের বাইরে। এটা অন্য সেশন ডিভিশন (অন্য অধিক্ষেত্র)। আর আইন অনুযায়ী মামলার বিচার হতে হবে উন্মুক্ত আদালতে।
এ সময় আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, এর আগে উনার মামলার বিচার তো আরেকটি কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হয়েছে, এখন আরেকটি কারাগারের অস্থায়ী আদালতে বিচারের বিষয়টি এসেছে। আগে কারাগারে আদালত স্থাপনের ক্ষেত্রে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? সেটা কি রেস্ট্রিকটেড ছিল না?
আমরা মনে করি এই আবেদনের সাথে এই মামলার চার্জশীট দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হত। এছাড়া, ওই আদালতের বিচারকের অধিক্ষেত্রের গেজেটটা আমাদের দেখানো উচিৎ ছিল।
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তাহলে আজকে এই পর্যন্তই রাখছি। আরেকদিন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ফারুক রহমানের বিচার জেলখানায় হয়েছে। হুসেইন মহম্মদ এরশাদের মামলাও চলেছিল। উনারাই সেটা করেছিলেন। বিডিআর মামলার অনেক আসামি। সেটার বিচার আলীয়া মাদ্রাসার পাশে কারা অধিদপ্তরের মাঠে হয়েছিল।
এ মামলাটাও ওখানে হত। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছিল। গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। পরে মামলাটি পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক কক্ষে স্থানান্তর করা হয়।
এর মধ্যে জেলখানা ট্রান্সফার হয়েছে। এখন ওই কোর্টটা জেলখানার ভেতরে নয় সামনে। আমাদের কাছে ল্যাপটপে বিষয়টি আছে। চাইলে দেখতে পারেন।
এ সময় আদালত সিডি জমা দিতে বলে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে মেট্রো সেশনের কোনো বিষয় না। বিশেষ জজ আদালতের মামলা। সুতরাং এখানে মেট্রো সেশনের কোনো সম্পর্ক নেই্।
এরপর এ জে মোহাম্মদ আলীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করে।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়।
আদালত স্থানান্তরে জারি করা সরকারের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা গত রোববার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি আবেদনটি করেন। মঙ্গলবার ওই রিটের শুনানি হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/জেএএম