ময়মনসিংহবাসীকে প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিতে চান মেয়র টিটু
২৯ মে ২০১৯ ১৪:৫০
ময়মনসিংহ: নতুন সিটি করপোরেশন হলেও ময়মনসিংহবাসীর জন্য সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান নবনির্বাচিত মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। মশা নিধন আর জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি সেবা খাতের দুর্নীতিও নির্মূল করতে চান তিনি। আর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে তিনি ভরসা রাখতে চান প্রযুক্তির ওপর। আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, সেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া তিনি ছড়িয়ে দিতে চান ময়মনসিংহেও।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মোবাইল ফোনে এসব কথাই সারাবাংলাকে বলেন টিটু। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই মেয়র মঙ্গলবার (২৮ মে) প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আজ বুধবার (২৯ মে) সকালে নগর ভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন তিনি।
সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার আগে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র হিসেবে টানা সাড়ে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার পর প্রথম প্রশাসকও ছিলেন তিনিই। এখন পেয়েছেন মেয়রের দায়িত্ব। স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ এই নেতার কাছ থেকে তাই নতুন এই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের চাহিদার তালিকাও নেহায়েত ছোট নয়।
আরও পড়ুন- শুধু ভোটে জিতলে চলবে না, জনগণের হৃদয়ও জয় করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
স্থানীয়দের চাহিদা কতটুকু পূরণ করতে পারবেন মেয়র টিটু? সিটি করপোরেশন নিয়ে তার পরিকল্পনাই বা কী? এসব জানতেই মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় মেয়রের। জানান তার ইচ্ছা আর পরিকল্পনার কথা।
সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে প্রথমে কোন কাজটি করতে চান— এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র টিটু বলেন, দেশে সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল প্রযুক্তির জোয়ার তৈরি হয়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ঘরে বসেই মিলছে সব ধরনের সেবা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে না। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করাই হবে আমার প্রথম কাজ।
এই সেবা কেমন হবে— তার উদাহরণ তুলে ধরে মেয়র বলেন, ধরুন, আপনি ময়মনসিংহের বাইরে দূরে কোথাও অবস্থান করছেন। কিন্তু আপনার নাগরিক সনদ এই মুহূর্তেই প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে মাত্র ১০ টাকা পরিশোধ করে আপনি ওই স্থানে বসেই পেয়ে যাবেন এ সনদ। বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ— প্রযুক্তির সহায়তায় সবকিছুই স্বল্প সময়ে সবাই পেয়ে যাবেন।
ময়মনসিংহবাসীর একসময়ের অন্যতম সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। সামান্য বর্ষণেই ডুবে যেত শহর। পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সমস্যা নিরসনে কাজ শুরু করেন টিটু। নগরীর প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ১২৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়। তবে এখনো নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েই গেছে। এ বিষয়টিও অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান তিনি।
টিটু বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তারপরও যতটুকু সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করব। নগরবাসীকে আমি উন্নত নাগরিক জীবন উপহার দিতে চাই। তার জন্য কেবল জলাবদ্ধতা নিরসন নয়, যা কিছু প্রয়োজন, সবই করতে চাই।
সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার সময় ময়মনসিংহ পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয় ১২টি ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ড মূলত গ্রামীণ এলাকা, যেখানে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। এই ওয়ার্ডগুলো নিয়েও কাজ করার কথা জানালেন মেয়র। তিনি বলেন, কোন ওয়ার্ড নতুন, কোন ওয়ার্ড পুরাতন, এটি দেখার বিষয় নয়। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ওয়ার্ডে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা ও সেবা পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
মেয়র বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, মশক নিধন, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মতো কাজগুলোও সমান গতিতে চলবে। কোনো কাজকেই কম গুরুত্ব দেওয়া হবে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থান জানিয়ে মেয়র টিটু বলেন, নগর ভবনে প্রতিটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। প্রতিটি বিভাগের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। নগরীর প্রতিটি ভবনে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও কঠোর হবে সিটি করপোরেশন।
ময়মনসিংহ নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদে রয়েছেন ইকরামুল হক টিটু। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তাকেই মেয়র পদে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। টিটু মনে করেন, দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আর কাজের যোগ্যতার কারণেই তাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আর সে কারণে তিনি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ময়মনসিংহকে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নগরবাসীর সহায়তাও চান তিনি।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ময়মনসিংহবাসী আগেও আমার পাশে ছিলেন। এখন আরও বড় দায়িত্ব আমার কাঁধে। আমার বিশ্বাস, সেবা ও উন্নয়নের যাত্রায় নগরবাসী ভবিষ্যতেও আমার পাশে থাকবেন। আর সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আমরা আমাদের স্বপ্নের ময়মনসিংহ গড়ে তুলব।
সারাবাংলা/টিআর