প্রশ্নফাঁস: ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্ত ১২৫, সিআইডির চার্জশিট
৩০ মে ২০১৯ ১১:২৮
ঢাবি: দেড় বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত প্রশ্নফাঁস মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আরও ৭৯ জনের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
নাম-ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শাহ আলম, ইমতিয়াজ আহমেদ এবং বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরলস পরিশ্রম, কর্মদক্ষতা এবং সুকৌশল পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতার হয় মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জন। এদের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে।’
প্রশ্নফাঁসে জড়িত ১০০ ঢাবি শিক্ষার্থীর তথ্য চাইল সিআইডি
দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে। সে রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। গ্রেফতার হয় মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থী। তাদের দেওয়া তথ্যে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাফিকে। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তে উঠে আসে, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো। ২০১৫ এবং ২০১৬, পর পর দুই বছর প্রশ্নফাঁসকৃত প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিল তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ মোট ২৮ আসামীকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে প্রশ্নফাঁস চক্রটির মূলোৎপাটন করে সিআইডি।
সিআইডি প্রধান জানান, মূলত দুই ভাবে জালিয়াতি হয়। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। অন্যটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করে। প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁসকারী পুরো চক্র চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করা গেছে। ধরা পড়েছে চক্রের মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, মূলহোতা ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম।
গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, এই মামলাটির তদন্ত ছিল সুবিশাল এক কর্মযজ্ঞ। এই কার্যক্রমে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় সমাজ থেকে প্রশ্নফাঁসের ব্যধি দূর করা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।
গত দেড় বছরে সিআইডির টানা অভিযান এবং একের পর এক আসামি গ্রেফতারের ফলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি-এইচএসসিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। সামনের দিনগুলোতেও প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সিআইডির বিশেষ নজরদারী থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের খবর পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাৎক্ষনিক তদন্তে প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ইতোমধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মানিলন্ডারিং মামলাও করেছে সিআইডি।
প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত ইডেনের সেই নেত্রী ছাত্রলীগের সহসম্পাদক!
যাদের নামে অভিযোগপত্র : মো. ইব্রাহিম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মোঃ মোস্তফা কামাল, মো. হাফিজুর রহমান, মো. মাসুদ রহমান তাজুল, মো রিমন হোসেন, মোঃ মহিউদ্দিন রানা, মো. আইয়ুব আলী বাধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, মোঃ অনোয়ার হোসেন, মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মোঃ বাবুল, টি এম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, মোঃ আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ ছোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসামী, বনি ইসরাইল, মোঃ মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, মোঃ বায়জিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মল্লিক, প্রসেনজিত দাস, মোঃ আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহাম্মেদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আব্দুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পী, মোঃ মশিউর রহমান সমীর, মোঃ আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ-উর-রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম সম্রাট, আবির হাসান হ্নদয়, মোর্শেদা আক্তার সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন পৃথক, শাহ মেহেদী হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহম্মেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, মোঃ লাভলুর রহমান লাভলু, মোঃ ইছাহাক আলী ইছা, মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিনা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, মোঃ আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রনয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, মোঃ শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, মোঃ রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, মোঃ রাকিবুল হাসান, এম. ফাইজার নাঈম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা লিয়ানা তালুকদার, মোঃ মোহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নূর সাইয়ারা নোশিন, মোঃ মাসুদ রানা, ইখতেখার আলম জিসান, মোঃ রাকিব হাসান, মোঃ খালিদ হাসান, আজলান শাহ ফাহাদ, সৌভিক সরকার, মোঃ রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলম সিদ্দিকী সম্রাট, মোঃ হাসিবুর রশিদ, মোছাঃ আফসানা নওরিন ঋতু, মোঃ মারুফ হাসান খান, মোঃ তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমা তুজ জোহরা মীম, শ্বাষত কুমার ঘোষ শুভ, মোঃ রাসেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, মোঃ আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, মোঃ সাদেকুল ইসলাম সুমন, মোঃ আব্দুল্লাহ, মোঃ খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, মোঃ শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, মোঃ হাসিবুর রহমান রুবেল এবং মোঃ মাকসুদুর রহমান শুভ।
সারাবাংলা/কেকে/এসএমএন