ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কাটছেই না
১ জুন ২০১৯ ১৯:৪৮
ঢাকা: ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরতে ট্রেন যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। তবে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে দেরিতে মিলছে কাঙ্ক্ষিত ট্রেন। এতে ক্রমশই বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি। কিন্তু রেলওয়ে কর্মকর্তারাও বলছেন, ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে না, ছাড়তে সামান্য বিলম্ব হচ্ছে মাত্র।
শনিবার (১ জুন) ট্রেনের ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রীরা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছেন। নির্ধারিত সময়ের তিন থেকে সাত ঘণ্টা পরও মিলছে না ট্রেন। শিডিউল বিপর্যয়ে শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীদের চোখমুখে ছিল বিরক্তি। তবে কোনোরকমে ট্রেনে উঠতে পারলেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছেন তারা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয় নয় বরং যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করতে নির্ধারিত সময়ের কিছু পরেই ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। এজন্য যান্ত্রিক ত্রুটি, যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে দেরিকেই দায়ী করছেন তারা। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রেনের কিছুটা বিলম্বকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়ার জন্য যাত্রীদের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পশ্চিমাঞ্চলগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের চিলাহাটির যাত্রী আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোর ৪টায় ছাড়ার কথা ছিলো ট্রেনের। তাই সেহেরি খেয়ে স্টেশনে এসেছিলাম। এসে শুনি ট্রেন সকাল ১১টার দিকে ছাড়বে। এটা শোনার পর কেমন লাগে চিন্তা করেন। কিন্তু ১১টার কথা বললেও এখন পৌনে ১২টা বাজে, ট্রেন এখনও আসেনি। আর কতো অপেক্ষা করা যায়?’
একই কথা বললেন বৃদ্ধ মা আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত অপর যাত্রী শাহ আলী। তিনি বলেন, ‘চিত্রা এক্সপ্রেস সকাল দশটায় ছাড়ার কথা, তাই যাতে কোনো দুর্ভোগ না হয় সেজন্য নয়টায় স্টেশনে আসি। এসে শুনি ট্রেন ১২টার দিকে ছাড়বে। তাই এখনও অপেক্ষা করছি। সকাল থেকে যতগুলো ট্রেন ছাড়ছে সবগুলো দুই-তিন ঘণ্টা দেরি করেই ছাড়ছে। কিন্তু কেন তা জানি না।’
পরে দুপুর ১২টার দিকে ৭ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে আসে নীলসাগর এক্সপ্রেস। এ ট্রেনটিই সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হয়েছে ছাড়তে। শিডিউল থেকে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পর ট্রেনটি স্টেশনে আসে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ট্রেনে উঠে নির্ধারিতে সিটে বসেছিলেন ফিরোজ-সুলতানা দম্পতি। তারা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ট্রেনে উঠতে পারছি। এটা অবশ্যই আনন্দের। যদি ট্রেনই না আসতো তাহলে কি অবস্থা হতো! এখন শুধু ভালো মতো বাড়ি ফিরতে পারলেই শুকরিয়া।’
স্টেশন মাস্টার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৭টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ১৯ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৮টা ২০ মিনিটে। পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে সকাল ১০টায়।
তবে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ভোর ৪টায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে দুপুর ১২টায়। আর খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস দশটায় ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে দুপুর ১২টায় বলেও জানান তিনি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আমিনুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে ট্রেন ছাড়াটা শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে না। কারণ আমরা চাই যাত্রীরা নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাক। যাত্রীদের কষ্ট দেওয়ার মাঝে তো আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। তাই এটিকে আমাদের দোষ না বলে বরং যাত্রীদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেনো নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না পেলে একটু ধৈর্য ধরেন।’
মূলত ট্রেনের বিলম্ব হয় যদি ট্রেনটি গন্তব্যে যাওয়ার পর সেটি স্টেশনে ফিরতে দেরি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের তেমন কোনো কিছু করার থাকে না। এটি সাধারণত হয় যখন দেখা গেল একটা স্টেশনে ট্রেনের জন্য সময় বরাদ্দ দুই মিনিট। কিন্তু সেখানে যাত্রী উঠা-নামায় লেগেছে পাঁচ মিনিট। তাহলে বিলম্ব হবে। কারণ ২ মিনিট শেষে তো আর ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়া যায় না, তাহল তো যাত্রীরা ট্রেনে কাটা পড়বে।’
ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আমিনুল আরও জানান, আবার যে ট্রেনটি ছাড়া হবে তার আগে সেটির যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলে সেগুলো মেরামত করতে হয়। আর মেরামতের কাজটি যতটা দ্রুত সম্ভব করা হয়। কিন্তু তাই বলে তাড়াহুড়ো করে কোনোরকমে ত্রুটি সারিয়ে ট্রেনটি ছেড়ে দিলে এবং কোনো অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা ঘটলে ঈদের আনন্দ তো ম্লান হবেই। সেই সঙ্গে দায়টাও আমাদের ওপরই বর্তাবে।
যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেনে ওঠা-নামার সময় ভিড় না করে অন্যদের সহযোগিতা করুন। এতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। আর এতে করে ঈদ আনন্দেও স্বস্তি মিলবে।’ রেল কর্তপক্ষ সবসময়ই চেষ্টা করে যতটুকু সম্ভব যাত্রী ভোগান্তি এড়ানো যায় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ৩৭টি আন্তঃনগর ট্রেন। এরমধ্যে উত্তরবঙ্গের ট্রেনে বেশি শিডিউল বিপর্যয় হয়। এদিন রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৬টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সোয়া ৮টায় স্টেশন ছাড়ে। উত্তরবঙ্গের আরেকটি ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ট্রেনটি দুপুর ১টার পরে ছেড়ে যায়। আরেক ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরি স্টেশন ছাড়ে।
আরও পড়ুন-
ট্রেনের বিলম্ব ছাড়া স্বস্তির ঈদযাত্রা
ট্রেন-বাসে এখনও স্বস্তির যাত্রা, চাপ বাড়বে কাল-পরশু
ঈদযাত্রায় রেলের শিডিউল বিপর্যয়, দেরি বেশি উত্তরবঙ্গের ট্রেনে
সারাবাংলা/এসএইচ/এমও