Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাসে-ট্রাকে দলে দলে চট্টগ্রাম ছাড়ছে মানুষ


৪ জুন ২০১৯ ২১:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল ফিতর উদযাপনে দলে দলে চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে যাচ্ছে নগরবাসী। জন্মস্থান কিংবা নিজ গ্রামে ছুটছেন সবাই। চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশপথগুলোতে এখন শেষ মুহুর্তের উপচে পড়া ভিড়। বাস না পেয়ে অনেকে ট্রাকেও গেছেন কাছের উপজেলাগুলোতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে শহর ছাড়ায় কোলাহলমুখর নগরীর এখন ভিন্নরূপ। তবে এবার মহাসড়কে যানজট না থাকায় এবং ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকায় চট্টগ্রাম থেকে স্বস্ত্বিতেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন লোকজন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (০৩ জুন) ছিল ঈদুল ফিতরের আগে শেষ কর্মদিবস। এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকেই মূলত চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে শুরু করে ভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। রেলস্টেশন ও বাসস্টেশনে ভিড় থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিল কম। এবার টানা আটদিনের ছুটি থাকায় মানুষ নিজের মতো করেই গন্তব্যে গেছে। তবে সোমবার শেষ কর্মদিবসের বিকেল থেকে ধীরে ধীরে চিত্র পাল্টেছে। বাসে-ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

মঙ্গলবার (০৪ জুন) দলে দলে যারা চট্টগ্রাম ছেড়েছেন, তাদের বেশিরভাগই নগরীর আশপাশের উপজেলা ও কাছের জেলার মানুষ। নগরীতে ঈদের নামাজ আদায় করে প্রতিবছরের মতো আরও কিছু মানুষ শহর ছাড়বে। এরপর চট্টগ্রাম নগরী পুরোপুরিই ফাঁকা হয়ে যাবে।

সঠিক কোনো হিসেব না থাকলেও পুলিশ-রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, ঈদ উদযাপনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে শুধুমাত্র ১০ লাখ মানুষ বাইরের জেলায় যান। চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে জেলার ভেতরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান আরও কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লোকে লোকারণ্য। প্রায় সবই দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ। বেশিরভাগই বাসে চেপে ছাড়ছেন চট্টগ্রাম নগরী। কিছু কিছু মানুষ বাস না পেয়ে ট্রাকেও ছেড়েছে নগরী। এছাড়া নগরীর দামপাড়া, বিআরটিসি, অলঙ্কার মোড়, কদমতলীসহ বাস স্টেশনগুলোতেও ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারের লোকজন মূলত চট্টগ্রাম ছাড়ছেন মঙ্গলবার।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় চন্দনাইশগামী বাসের যাত্রী আরিফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা গত শুক্রবার চলে গেছে। আমি আজ (মঙ্গলবার) যাচ্ছি। যাত্রী অনেক হলেও গাড়িও আছে। সবচেয়ে সুবিধা হয়েছে বিআরটিসি’র বাসেও অনেককে নেওয়া হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বাঁশখালীর জলদী এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম আদালতের কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে। ননস্টপ বাসের কথা বলে ১০০ টাকার ভাড়া ডবল নিচ্ছে। তারপরও ভালোভাবে যেতে পারছি, এটাই বড় কথা।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শাহ আমানত সেতু এবং এ কে খান এলাকায় আমরা দু’টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছি। সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশ সদস্যরা আছে। যাত্রীদের যে কোনো অভাব-অভিযোগ এবং যানবাহন যাতে সুশৃঙ্খলভাবে যায়, সেই ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন।’

তবে ঈদযাত্রায় এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে যেতে সড়কপথে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে না। মেঘনা, গোমতী ও কাঁচপুর সেতু খুলে দেওয়ায় পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কেও এবার যানজট নেই।

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর দামপাড়া মোড়ে ইউনিক বাস কাউন্টারে গিয়ে কথা হয় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঢাকা থেকে আসা ইউসিবিএল ব্যাংকের কর্মকর্তা জাফর আলমের সঙ্গে। নগরীর আসকার দিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা জাফর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকায় বাসে উঠেছি। দেড়টায় এসে দামপাড়া নেমেছি। বরাবর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে পৌঁছেছি।’

নগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকায় এস আলম বাসের চালক কামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা, এর বেশি সময় লাগছে না। ঢাকা থেকে বের হতে সামান্য জ্যামে পড়তে হয়। চট্টগ্রামে সিটি গেইট দিয়ে ঢোকার পর জিইসি মোড় পর্যন্ত আসতে কিছুটা সময় লাগে। মহাসড়কের কোথাও একটুও জ্যাম নেই।’

চট্টগ্রাম থেকে এবার ঢাকাগামী ট্রেনের কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। ময়মনসিংহ-চাঁদপুরসহ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের সূচিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও তা আধাঘণ্টার মধ্যেই ছিল বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ম্যানেজার আবুল কালাম।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরী প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। যানবাহনের দেখা মিলছে, তবে অনেক কম। শেষ মুহুর্তে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট-শপিংমলে কেনাকাটার ভিড় আছে। নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা কাজের সূত্রে যারা চট্টগ্রাম ছাড়তে পারেননি, মূলত তারাই আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন আরও কিছু মানুষ চট্টগ্রাম ছাড়বে। তারপর পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যাবে নগরী। ঈদের বন্ধের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ নগরীতে মোতায়েন থাকবে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিএস

ঈদযাত্রা ঘরমুখো মানুষ চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর