ফাঁকা ঢাকায় অলস সময় কাটছে ট্রাফিক পুলিশের
৭ জুন ২০১৯ ১৯:২৮
ঢাকা: ঈদের দিন সকাল থেকে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা হাতেগোনা। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে দিনের বেশিরভাগ সময়ই যেখানে গাড়ির চাপের কারণে গতি নেমে আসে শূন্যের কোঠায়, সেখানে এখন ৫-১০ মিনিট পরপর হয়তো একটি করে বাস পার হচ্ছে সড়ক। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে দুয়েকটি সিএনজির। আর সাঁই সাঁই করে বেরিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রাইভেট কার আর মোটরসাইকেল। সাধারণ দিনগুলোতে তাই যখন পরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ঘাম ছুটে যায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের, সেখানে ঈদের তৃতীয় দিন এসে অলস সময় পার করছেন তারা।
আরও পড়ুন- ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ
শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বাসিন্দাদের অর্ধেকেরও বেশি ছুটে গেছেন গ্রামে। ফলে ঢাকায় মানুষ ও গাড়ির চাপ এখন নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাট একেবারই ফাঁকা।
রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়, যাত্রাবাড়ী, ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, মৎসভবন মোড়, কাকরাইল, পল্টন মোড়, শাহবাগ, বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক পুলিশের বেশিরভাগ সদস্যই বসে অলস সময় পার করছেন।
মতিঝিল ট্রাফিক বক্সে বসে সময় পার করছিলেন জাকির হোসেন ও আবদুল মালেক। তারা বলেন, গাড়ির চাপ নেই, তাই যানজটও নেই। দাঁড়িয়ে থাকার পরিবর্তে তাই বসেই সময় পার করছি। একদিন পরই তো আবার শুরু হবে গাড়ির চাপ। তখন দম ফেলার সময় থাকবে না।
মৎসভবন মোড়ে আলী আজগর নামে এক ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘সবাই ঈদের ছুটিতে গেলে ডিউটি পালন করবে কে? এই ঈদে আমরা যেতে পারিনি, হয়তো আগামী ঈদে ছুটিতে যাব। এবার যারা ছুটিতে গিয়েছিল তারা একইভাবে ডিউটি করবে।’ সবাই ঈদে বাড়ি গিয়ে আনন্দ করলেও যারা যেতে পারেনি, তাদের এই ছুটিতেও যে সেবা দিতে পারছেন, সেই অভিজ্ঞতাও আনন্দের বলে জানান তিনি।
বাংলামোটর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অন্য স্পটগুলোর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা এখানে একটু বেশি। চার রাস্তার মোড় হওয়ায় প্রায় ফাঁকা রাস্তাতেও নিয়ম মেনে সিগন্যাল দিতে হয়। তাই এখানকার ট্রাফিক পুলিশকে একটু সময় দিতে হচ্ছিল। সেটুকু দায়িত্ব অবশ্য ধর্তব্য নয় বলেই মনে করছেন ট্রাফিক সদস্যরা।
জানতে চাইলে ট্রাফিক সদস্য আজম আলী বলেন, অন্যান্য সিগনালের তুলনায় বাংলামোটরে গাড়ির চাপ একটু বেশি। তারপরও সাধারণ দিনের তুলনায় এ তো কিছুই না। কিন্তু এ অবস্থা তো আর বেশিক্ষণ থাকবে না। শুক্র-শনিবারটা চলে গেলেই রাস্তার পরিস্থিতি আগের মতো হতে শুরু করবে।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ না করে ঢাকায় রয়েছেন কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য আসাদুল হাবীব বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি পাইনি। তাই যাওয়া হয়নি। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানেরা ঈদ করছে। আমি যেতে পারিনি, কিন্তু কথা হচ্ছে সবসময়। আর এখন তো নেট আছে। সকাল-বিকেল ভাইবার-ইমোতে ভিডিও কলে দেখতেও পারছি সবাইকে।
এদিকে, রাস্তা ফাঁকা পেয়ে অনেক চালকই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে অবশ্য ব্যবস্থাও নিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। বনানীতে ট্রাফিক সার্জেন্ট আলামিন বলেন, রাস্তা ফাঁকা থাকায় বেশিরভাগ চালক ছুটিতে গেছে। এসময় মালিক বা মালিকের ছেলে গাড়ি চালাচ্ছেন। তারা কিছু বুঝছেন না। তাদের লাইসেন্স নেই, আবার বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আলামিন জানালেন, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্তত ৫০টি প্রাইভেট কারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। অনেক মোটরসাইকেল আরোহী হেলমেট ব্যবহার না করায় তাদেরও জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান ট্রাফিক সার্জেন্ট।
অন্যদিকে ফাঁকা ঢাকায় ঘুরতে বের হওয়া মানুষেরা রয়েছে স্বস্তিতে। মাত্র কয়েক মিনিটেই রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাওয়া যাচ্ছে, কোথাও সিগন্যালে পড়তে হচ্ছে না— বছরে খুব অল্প সময়ই এমন বিরল অভিজ্ঞতা নিতে পারেন তারা। তবে ঈদের কারণে গণপরিবহনে ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘বকশিশে’র চাপ। ফাঁকা রাস্তায় উড়তে উড়তে চলার আনন্দে সেই চাপকেও পাত্তা দিচ্ছেন না রাজধানীবাসী।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর