বিএনপি ৬ দফা-৭ মার্চ পালন করে না কেন, প্রশ্ন তথ্যমন্ত্রীর
৭ জুন ২০১৯ ২০:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপি ছয় দফা দিবস ও সাতই মার্চ পালন করে না কেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা নিয়েই তিনি ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন এবং জনগণকে সংগঠিত করেছিলেন। এজন্য তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল। জনতার আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।
‘এরপর তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে বাঙালিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন,’— বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বলে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। তাহলে তো তাদের সঙ্গে ছয় দফা ও ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। তাহলে তারা ছয় দফা ও ৭ মার্চ পালন করে না কেন? তারা করে না, কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।’
‘আমরা নিকট অতীতে দেখেছি, যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পর পাকিস্তান থেকে থেকে তাদের পক্ষে বিবৃতি এসেছে, আর দেশে বিএনপি তাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। আমরা আরও আগে দেখেছি, পাকিস্তানের একজন সেনাপ্রধানের মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের সমস্ত প্রটোকল ভেঙে শোক জানিয়েছিলেন। এতে প্রমাণ হয়, বিএনপি একটি পাকিস্তানপন্থী দল এবং তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না,’— বলেন হাছান মাহমুদ।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ‘রাজনীতির উচ্ছিষ্ট কাক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। রাস্তায় উচ্ছিষ্ট ছড়ালে খাওয়ার জন্য কাকের অভাব হয় না। তেমনি রাজনীতির উচ্ছিষ্ট কাকদের নিয়ে জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির যারা সিনিয়র নেতা, তারা সবাই রাজনীতির কাক। কারণ এরা সবাই আগে অন্য দল করতেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগে অন্য দল করতেন। মওদুদ আহমেদ সব দল করতেন— আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি হয়ে আবার বিএনপিতে ফেরত গেছেন। খন্দকার মোশাররফ ছাত্রলীগ করতেন। রুহুল কবির রিজভী ছাত্রজীবনে বাম সংগঠন করতেন।’
চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা কেউ কেউ আগে বামপন্থী দল করতেন। কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। আওয়ামী লীগে আসতে চেয়ে না পেরে বিএনপিতে গেছেন, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছেন।’
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, পাক-ভারতেও কোনো বন্দি এত সুবিধা পায়নি। অথচ তিনি রাজবন্দি নন, তিনি দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন। কয়েকদিন আগে তিনি জিহ্বায় কামড় খেয়েছিলেন, সেজন্য খাওয়া-দাওয়ায় তার একটু সমস্যা হচ্ছিল। অথচ মির্জা ফখরুল আর রিজভী আহমেদরা সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, খালেদা জিয়ার জীবন নাকি সংকটাপন্ন। আরে, মাঝে মাঝে কামড় তো আমরাও খাই। খালেদা জিয়া তো নিজের কামড় নিজে খেয়েছেন, তার জিহ্বায় তো অন্য কেউ কামড় দেয়নি।’
একই সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তরুণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘গোত্রভুক্ত হয়ে স্লোগানের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে ইতিহাসকে জানতে হবে। রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, সেখানে ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। জাতির জনকসহ আমাদের পূর্বসূরীরা কত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশটি স্বাধীন করেছেন, সেই ইতিহাস জানতে হবে। ঐতিহাসিক ছয় দফা বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম থেকেই ঘোষণা হয়েছিল। সেই চেতনা আমাদের ধারণ করতে হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
আওয়ামী লীগ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল