আওয়াজ নেই ফ্রন্টে, ২০ দল খুঁজছে ভিন্ন পথ
৭ জুন ২০১৯ ১০:৫৮
ঢাকা: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক ক্ষোভ ও ঈর্ষাকে কাজে লাগিয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব— এমন ভাবনা থেকে নির্বাচনের আগে গড়ে তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আপাতত কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিকরা খুঁজছেন ভিন্ন পথ।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি বার বার বৈঠক করেছে। সেসব বৈঠকে কিছু কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। পালনও করা হয়েছে কিছু কর্মসূচি।
নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর গত ৮ জানুয়ারি ড. কামাল হোসেনের বাসায় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। সে বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংলাপ, জেলায় জেলায় সফর-গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
আরও পড়ুন- ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলকে একীভূত করার চিন্তা
এই ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি সিলেটের বালাগঞ্জ যান জোটের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত ছাত্রদল নেতার পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে ছিল তাদের এই সফর। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে গণশুনানির আয়োজন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ২০ এপ্রিল কুমিল্লা যান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এরপর আর কোনো আওয়াজ নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।
শপথ গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময় ৯০ দিন পার হওয়ার আগে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের চেম্বার অথবা বাসায় যতগুলো বৈঠক হয়েছে, তার সবগুলোরই শেষে কোনো না কোনো কর্মসূচির কথা বলেছেন জোট নেতারা। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে জানানো হয়, নুসরাত হত্যাকাণ্ডসহ সারাদেশে সংঘটিত নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ৩০ এপ্রিল শাহবাগে ‘গণজমায়েত’ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
কিন্তু ২৯ এপ্রিল রাতে বিএনপির চার সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পূর্বঘোষিত ‘শাহবাগে গণজমায়েত’ কর্মসূচি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। তারপর থেকেই নীরব জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যের মধ্যে সাত জনের শপথ গ্রহণ এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছেড়ে দেওয়া আসনে বিএনপির নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছেন ফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। সেই আলটিমেটামের সময় সীমা শেষ হচ্ছে শনিবার (৮ জুন)।
আরও পড়ুন- জোট থেকে ‘সিকি-আধুলি’ বাদ দিতে চায় বড় শরিকরা
এছাড়া গত ৩০ এপ্রিলের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নির্বাচনের পর থেকেই রয়েছেন ফ্রন্টের বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চার শরিক বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য— কারও মধ্যেই আর ফ্রন্ট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির একটি বড় অংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকর্মী চাচ্ছেন না, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আর বেশি মাতামাতি করুক বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। এ ব্যাপারে যা কিছু বলার আমাদের সেক্রেটারি জেনারেল (মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) বলবেন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোজা ও ঈদের কারণে আমাদের কার্যক্রম ততটা দৃশ্যমান হয়নি। এ জন্য হয়তো আওয়াজ কম পেয়েছেন। তবে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামব আমরা।’
আরও পড়ুন- দুই জোটেই ভাঙন, টালমাটাল বিএনপি
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এর ইমধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জোট ছেড়েছেন জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। বাকি শরিকরাও ভিন্ন পথের সন্ধান করছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপি জোটের আরও কয়েকটি শরিক দল জোট ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। এদের মধ্যে বড় দুই শরিক জামায়াত ও এলডিপি বিএনপির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেষ্টা করছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে (জাপা) ফিরে যেতে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (মুফতি ওয়াক্কাসের অংশ) গ্রিন সিগন্যাল পেলেই ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দেবে। বাকি দলগুলোর মধ্যেও জোট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়াতে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’
মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত জোটে আছি। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা ভবিষ্যৎ-ই বলে দেবে।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
২০ দল ২০ দলীয় জোট গণফোরাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জাতীয়-নির্বাচন বিএনপি