বিজ্ঞাপন

দুই জোটেই ভাঙন, টালমাটাল বিএনপি

May 9, 2019 | 9:58 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা দু’টি জোটে একই সময় ভাঙন ধরায় ‘টালমাটাল’ অবস্থায় পড়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক আন্দালিভ রহমান পার্থের জোট ত্যাগের ঘোষণা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জোট ছাড়ার আলটিমেটাম ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপিকে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রত বিএনপির শীর্ষ নেতারা। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। গত দুই দিন এ নিয়ে দলীয় ফোরামের আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিষয়টি ঘুরে ফিরে আসছে। নির্বাসনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রধানের মুক্তির পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে টিকে থাকার জন্য বিএনপি যখন সরকারের বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, ঠিক তখন পুরনো রাজনৈতিক মিত্রের জোট ছাড়ার ঘোষণা এবং নতুন মিত্রের জোট ছাড়ার আলটিমেটাম বিএনপির জন্য ভালো বার্তা নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, সাংগঠনিক শক্তি ও জনভিত্তি না থাকলেও বিএনপির এই সংকটকালে শরিকদের জোট ছাড়ার ঘোষণা ও আলটিমেটাম দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের দিকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়বে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার জন্য ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট বিলুপ্ত করে ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়। পুরনো শরিক বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে জোটে যোগ দেয় এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, লেবার পার্টি, এনডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও পিপলস পার্টি (পিএল)।

পরবর্তী সময় এই জোটের সঙ্গে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে রূপ নেয়।

কিন্তু এই জোটের অখণ্ডতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বিএনপির পক্ষে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করায় জোটের কয়েকটি শরিক দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সেই অসন্তোষের জের ধরে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বাধীন এনপিপি।

বিজ্ঞাপন

ওই সময় তার সঙ্গে যোগ দেয় বিএনপি জোটের আরও দুই শরিক দল শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী এবং আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এনডিপি (একাংশ)। এই তিন দলসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) নামে একটি জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করেন শেখ শওকত হোসেন নীলু।

এরপর বিএনপি জোটে সব চেয়ে বড় ফাটল দৃশ্যমান হয় ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি। সেদিন ২০ দলীয় জোটের তৃতীয় শক্তি ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকল্প আরেকটি ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যায় জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে জোট শরিকদের এই সরে পড়া বিএনপিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

সর্বশেষ ৬ মে বিএনপি জোট থেকে সদলবলে বেরিয়ে যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া এবং জোটের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ গ্রহণ মেনে নিতে পারেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

পুরাতন শরিক হারানোর এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই বৃহস্পতিবার (৯ মে) আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জোট ছাড়ার আলটিমেটাম দেন। জোটের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গণফোরাম ও বিএনপির সাত বিজয়ী প্রার্থী শপথ গ্রহণ করায় তিনি এ আলটিমেটাম দেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও আন্দালিভ রহমান পার্থের বিজেপি ছাড়াই চলতে পারে। কিন্তু যে মুহূর্তে বিএনপি নেতারা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে এই দুই আলোচিত ব্যক্তির জোট ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলটিকে চিন্তায় ফেলে দেবে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পথে কিছুটা হলেও অন্তরায় সৃষ্টি করবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সম্মতির ভিত্তিতে আমরা জোট গঠন করেছিলাম। সেখানে সবাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসেছিলেন। এখন আবার তারা নিজেদের মতো করে চলে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তাছাড়া কেউ চলে গেলে তো জোর করে রাখাও যাবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার অব্যহত চেষ্টার মধ্যেই দুয়েকটি রাজনৈতিক দল যদি জোট ছেড়ে যায়, সেটা কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কিন্তু রাজনীতিতে এটা এমন কোনো ঘটনা নয়।অতীতেও এ ধরনের ঘটনা অনেকবার ঘটেছে।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন