করমুক্ত আয়সীমা না বাড়লে চাপে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ
১১ জুন ২০১৯ ১৭:১৯
ঢাকা: গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেও করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকাই স্থির থাকছে। অর্থাৎ অর্থবছরটিতে কেউ আড়াই লাখ টাকা আয় করলেই তাকে আর আয়কর দিতে হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, গত কয়েক বছর ধরেই ব্যবসায়ী সংগঠন ও অর্থনীতিবিদরা করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি করে আসছিলেন। নতুন অর্থবছরেও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো না হলে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিৎ ছিল। এটি যদি না হয় তাহলে প্রান্তিক মানুষের উপর করের বোঝা বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের উপর কর চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা, সেই অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে। ফলে, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বার্থেই এটিই বাড়ানো উচিত ছিল।
মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশে প্রতিটি মানুষের আয় বেড়েছে। আয় বেড়েছে নিম্ন আয়ের কর্মকর্তাদেরও। ফলে, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো দরকার ছিল। সাধারণ করদাতাদের জন্যে সাড়ে তিন লাখ ও নারীদের জন্য অন্তত ৪ লাখ টাকা করা উচিৎ ছিল। এটি না করায় নিম্ন আয়ের মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর সারাবাংলাকে বলেন, সব পক্ষ থেকেই ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি ছিল। শেষ মুহূর্তেও যদি এটি বাড়ানো হয়, বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তাহলে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন হয়ে গেলে পাস হওয়ার আগে হলেও এটিতে সংশোধন আনা উচিৎ।
তথ্যমতে, ২০১১-১২ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ২০১২-১৩ তে ২ লাখ এবং ২০১৩-১৪ তে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়। এরপরে গত তিন বছর ধরে করমুক্ত আয়সীমা আর বাড়ানো হয়নি। তবে তারও আগে প্রায় প্রতিটি অর্থবছরের বাজেটেই এই সীমা বাড়ানো হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয় সীমা আড়াই লাখ টাকা। নারী, পয়ষট্টি বছর তদূর্দ্ধ করদাতার আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধি ব্যক্তির করমুক্ত আয় সীমা ৪ লাখ টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় সীমা ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গত ৩০ এপ্রিল এনবিআরের পরামর্শক কমিটির সভায় ব্যক্তি-শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এর যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত গড়ে ৫ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি ছিল। এর ফলে করদাতাদের জীবনমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করদাতাদের ওপর করভার কমানো, দেশ থেকে মূলধন পাচারের প্রবণতা হ্রাস, সঠিক আয় প্রদর্শনে উৎসাহিত এবং নতুনদের করের আওতায় আসার আগ্রহ সৃষ্টি করতে করমুক্ত আয়ের সীমা পুননির্ধারণ করা দরকার। এসব দিক বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। একইভাবে অন্যান্য শ্রেণীর করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছিল সংগঠনটি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেএএম