থানা হাজতে ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ, ৪ পুলিশ বরখাস্ত
১৫ জুন ২০১৯ ২১:০৫
বগুড়া: বগুড়ায় থানা হাজতে সোহান বাবু আদর (৩২) নামে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মন্ডল তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরা হলেন, বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জোব্বার, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এরশাদ ও নিয়ামত এবং কনস্টেবল এনামুল।
সোহানের বাড়ি বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া উটের মোড় এলাকায়। তার বাবার নাম সাঈদুর রহমান। তিনি জানান, শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় আল ফালাহ বহুমুখী সমিতি রয়েছে সোহানের। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া। তিনজন মিলে সমিতিটি পরিচালনা করেন।
সাঈদুর রহমান অভিযোগ করেন, সাথী ও বাপ্পির অভিযোগে কনস্টেবল এনামুল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত ১১টার দিকে সোহানকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে নেন। সোহান থানায় গেলে উপপরিদর্শক (এসআই) জোব্বার, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এরশাদ ও কনস্টেবল এনামুল তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে পাশের একটি কক্ষে আটকে রাখেন এবং ১১ লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গভীর রাতে সোহানকে তারা নির্যাতন করেন। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় থানায় লোকজন থাকে না, সেই সুযোগে তারা সোহানের হাত-পা বেঁধে আবারও লাঠি দিয়ে বেদম পিটুনি দেন। সে সময় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নিয়ামত উপস্থিত ছিলেন।
সাঈদুর রহমান আরও অভিযোগ করেন, থানা হাজতে সোহানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে এসআই জোব্বার তাকে ফোন করে থানায় যেতে বলেন। তার ছেলে গুরুতর আহত হওয়ার পরও সাদা কাগজে মুচলেকা নেওয়া হয়, সোহান সুস্থ রয়েছে। সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকাও নেওয়া হয়। সোহান বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তবে কী অভিযোগের ভিত্তিতে সোহানকে থানায় নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি সাঈদুর রহমান।
সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া শহরের কাটনারপাড়া আলোরমেলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক।
এ বিষয়ে কথা বলতে এসআই জোব্বার ও এএসআই এরশাদকে কল করা হলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কনস্টেবল এনামুল হক বলেন, ‘আমি সামান্য চর-থাপ্পর মেরেছি।’
এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান মোবাইল ফোনে জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোহান বাবু আদরকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে বাদী ও বিবাদীর মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেলে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে কী অভিযোগের ভিত্তিতে সোহানকে থানায় নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। এক প্রশ্নের জবাবে এস এম বদিউজ্জামান বলেন, সোহানকে নির্যাতনের কথা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানতন চক্রবর্তী জানান, জরুরি কাজে বগুড়া পুলিশ সুপার মহোদয় জেলার বাহিরে আছেন। তিনি বগুড়ায় এলেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম মন্ডল জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এসআই জোব্বার, এএসআই এরশাদ ও নিয়ামত এবং কনস্টেবল এনামুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এটি