কারাগারে মাদক পৌঁছে দেয় কারারক্ষী, বন্দির হাতে মোবাইল
১৬ জুন ২০১৯ ২১:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কারারক্ষীর মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা-গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। কারাগারে মাদক সেবন তো চলছেই, সেখানে বসে বন্দিদের কেউ কেউ আবার মাদক ব্যবসাও পরিচালনা করছে। কারাবিধি লঙ্ঘন করে কারাগারের ভেতরে বন্দিরা মোবাইলও ব্যবহার করছে। মোবাইলের মাধ্যমেই চলছে তাদের মাদক ব্যবসা।
শনিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় সাইফুল ইসলাম নামে এক কারারক্ষীকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গ্রেফতার সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়া গেছে- ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নুর আলম ওরফে হামকা নুর আলম কারাগারে বসেই মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। কারাগারের ভেতরে তার কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেয় কারারক্ষী সাইফুল। একইভাবে নুর আলমের নির্দেশে কারাগারের বাইরেও চলছে মাদক ব্যবসা।
ওসি মহীসন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর কদমতলী ফ্লাইওভারের ওপর থেকে কারারক্ষী সাইফুল ইসলামকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় সাইফুল অটোরিকশায় ছিল। তার কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। একই ঘটনার সূত্র ধরে পরে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে আছে- দিদারুল আলম মাছুম ওরফে আবু তালেব মাছুম (৩৫), আজিজুল ইসলাম জালাল (৩৬) ও আলো বেগম (৩৫)। এদের মধ্যে জালালের কাছে ১০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে।
ওসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানিয়েছে, ইয়াবাগুলো সে চট্টগ্রাম কারাগারের ৩২ নম্বর সেলের তিন নম্বর কক্ষে বন্দি নুর আলম ওরফে হামকা নুর আলমের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। এই ইয়াবা সে সংগ্রহ করেছে নগরীর লালদিঘীর পাড়ে মাসুমের কাছ থেকে। হামকা নুর আলমই মাসুমকে ইয়াবাগুলো সাইফুলকে দেওয়ার জন্য বলেছিল। লালদিঘীর পাড় এলাকায় মাসুমের কাছ থেকে ইয়াবা নেওয়ার সময় নুর আলম কারাগারের ভেতর থেকে তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে।
নুর আলমের নির্দেশ ছিল, মাসুমের কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবার মধ্যে ১০ পিস হালিশহরের কাঁচাবাজার এলাকায় লিটনের কাছে দেওয়ার জন্য। ওই ব্যক্তি সাইফুলকে ২ হাজার টাকা দেবে। সেই টাকা আবার নুর আলমের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হালিশহরে যাবার পথে সাইফুল ধরা পড়ে।
থানায় নিয়ে সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জালাল তার মোবাইলে ফোন করে। এসময় পুলিশ কৌশলে সাইফুলের মাধ্যমে জালালকে লালদিঘীর পাড়ে এনে গাঁজাসহ আটক করতে সক্ষম হয়। এরপর মাসুমকে নগরীর এনায়েতবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুমকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, নগরীর জামতলা বস্তি এলাকার আলো বেগমের কাছ থেকে ইয়াবাগুলো সংগ্রহ করে সে সাইফুলকে দিয়েছিল। এই তথ্য পেয়ে আলো বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়।
ওসি মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাসুমও আগে কারাগারে ছিল। তখন নুর আলমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কারাগার থেকে বের হবার পরও মাসুমের সঙ্গে নুর আলমের যোগাযোগ আছে। নুর আলমের নির্দেশেই সে ইয়াবা ব্যবসা করে। নুর আলম, মাসুম, জালাল, আলো এরা একই সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা কারাগারের ভেতরে ও বাইরে ইয়াবা আনা-নেওয়া, বিক্রিতে ব্যবহার করে কারারক্ষী সাইফুলকে।’
এই মাদক কারবারে আরও কোনো কারারক্ষী জড়িত কি-না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি।
চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকা দাপিয়ে বেড়ানো ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী বাহিনী ‘হামকা গ্রুপের’ প্রধান ছিল নুর আলম। তার বিরুদ্ধে ছয়টি অস্ত্র মামলাসহ ১০টি মামলা আছে। ২০১৭ সালে নুর আলমকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আর নুর আলমের মাদক ব্যবসার সহযোগী মাসুমের বিরুদ্ধে ১২টি মাদকসহ মোট ১৩টি মামলা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওসি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল আরও জানিয়েছে- হামকা নুর আলমের নির্দেশে সে আরও কয়েকবার মাসুমের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে কারাগারে নিয়ে গেছে। সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ই কারাগারের ভেতর থেকে হামকা নুর আলম তার মোবাইলে ফোন করে। নুর আলম জানতে চায়, জালালের কাছ থেকে গাঁজাগুলো সংগ্রহ করেছে কি না।
কারাগারের ভেতরে নুর আলমের কাছে ইয়াবা-গাঁজা পৌঁছে দেওয়ার পর সেগুলো সেখানে বিক্রি হয় এবং নিয়মিত মাদকের আসর বসার তথ্যও সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতার কারারক্ষী সাইফুলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার বাকি তিনজন ও কারাবন্দি নুর আলমকেও আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
জেলের ভেতরে মাদকের ব্যবসা ও সেবন এবং বন্দিদের মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. নাশির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারারক্ষী সাইফুলকে গ্রেফতারের পর মাদকের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি। মোবাইল ব্যবহারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
গ্রেফতার সাইফুলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার নাশির আহমেদ।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই