Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যৌন হয়রানির অভিযোগে কিছুই করার নেই বিএমডিসি’র!


১৮ জুন ২০১৯ ১১:১১

ঢাকা: রাজধানীর একটি বেসরকরি হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এক নারী রোগী। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চিকিৎসককে হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বিএমডিসি’তে (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনাই নেই!

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন চিকিৎসককে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের যেসব শর্ত পূরণ করে আসতে হয় তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর কোনো ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ থাকতে পারবে না। এটা স্পষ্টত নীতিমালা বিরোধী। কিন্তু একইসঙ্গে কেউ সে নীতিমালা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু লেখা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানের অভিযোগ আনেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, “প্রথমত এটা অনৈতিক। অনৈতিকতার কারণে বিএমডিসি তাকে শাস্তি দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভুক্তভোগী চাইলে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করতে পারে। দু’টো কেসই প্রযোজ্য।”

একইসঙ্গে বিএমডিসির নীতিমালায় লেখা রয়েছে কোনো নারী রোগীকে ‘এক্সামিন’ করতে হলে সেখানে কি কি করতে হবে। সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, নিশ্চয়ই সেখানে আরেকজন নারীকে উপস্থিত থাকতে হবে।

কিন্তু যৌন হয়রানির অভিযোগে কোনো চিকিৎসক অভিযুক্ত হলে বিএমডিসির নীতিমালায় তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সে সর্ম্পকে কিছু বলা নেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা যে অনৈতিক সেটা তো বলাই আছে। ‘ইট ইজ অ্যা মেন্ডেটরি টু প্রেজেন্ট অ্যা ফিমেল অ্যাটেনডেন্ট।’ কোনো চিকিৎসক এর ব্যত্যয় করলে বিএমডিসি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

‘এই বিষয়গুলো বৈশ্বিকভাবেই চিকিৎসকদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে যদি প্রয়োগ না হয় বা ফলো করে কিংবা করা হয় কিনা সেটা ভিন্ন ব্যাপার’, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের এক চিকিৎসকের উদাহরণ দিয়ে ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশের এক চিকিৎসক এ ধরনের অনৈতিক কাজ করেছিলেন। যে কারণে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে সেখানকার কারাগারে রয়েছেন। এগুলো বিশ্বজুড়েই চিকিৎসকদের জন্য নৈতিকতার ভেতরে রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে এর প্রাকটিস নাই।’

যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরিচ্যুত পপুলারের চিকিৎসক

“যেহেতু এখানে মেন্ডেটরি বিষয়ের লঙ্ঘন হয়েছে তাই বিএমডিসি তার নাম ‘উইথড্র’ করতে পারে, তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারে, ‘ইট উইল কাভারআপ উইথ অনৈতিক”, বলেন ডা. রশিদ-ই-মাহবুব।

উল্লেখ্য, বিএমডিসির নীতিমালায় ‘কোড অব প্রফেশনাল কন্ডাক্ট এটিকুইট অ্যান্ড এথিক্স’ শিরোনামে চিকিৎসকদের জন্য ‘ইমপ্রপার পারসোনাল রিলেশনশিপ উইথ প্যাসেন্টস’ ক্লজে চিকিৎসকদের জন্য বলা হয়েছে, চিকিৎসাবিদ্যায় যেকোনো ক্ষেত্রে অনৈতিক কাজ পেশাগত কাজের মধ্যে পরে না। কোনো চিকিৎসক যদি রোগীর দুবর্লতা বা যে কোনো কারণে যৌন হয়রানি বা রোমান্টিক কিংবা আবেগতাড়িত করে সুবিধা আদায় করে তাহলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) তার বিরুদ্ধে সিরিয়াস অ্যাকশন নিতে পারবে।

সেখানে আরও লেখা রয়েছে, চিকিৎসার কারণে চিকিৎসককে রোগীর সঙ্গে খুব ব্যক্তিগত সর্ম্পক গড়তে হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত সর্ম্পক গড়তে গিয়ে তাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ওই সর্ম্পকের কারণে যাতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, বা সে যেন কোনো ধরনের অনৈতিক হয়রানির শিকার না হয়। ব্যক্তিগত সর্ম্পক গড়তে গিয়ে অবশ্যই চিকিৎসককে দায়িত্বশীল আচরণ এবং আস্থার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। চিকিৎসককে এ ক্ষেত্রে খুব যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক অভিযোগ না ওঠে।

তবে বিএমডিসির নীতিমালায় এসব অভিযোগে অভিযুক্ত হলে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো জাহেদুল হক বসুনিয়া সারাবাংলাকে বলেন, “এটাই যোগ করতে হবে। এই ‘এটিকোট’টা আমরা তৈরি করেছি এক বছরও হয় নাই, আগে এটাও ছিল না। এখন এর ভিত্তিতে যখন রেগুলেশন তৈরি হবে তখন সেটি পাস হলে আইনের সংশোধনও করতে হবে। এগুলো আসলে ধাপে ধাপে করতে হবে।”

ডা. বসুনিয়া জানান, গত ২৫ মে কাউন্সিলের জেনারেল সভা হয়েছে যেখানে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলরাও ছিলেন। সেখানে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে কোন কোন বিষয়গুলো যৌন হয়রানির মধ্যে পরবে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটাও সুপারিশ করবে সে কমিটি।

এর আগে তো এসব বিষয় ছিল না মন্তব্য করে ডা. জাহিদুল হক বসুনিয়া বলেন, ‘গত ২৭ বছর ধরে কাজ করছি, কিন্তু এরকম কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। চিকিৎসকের অদক্ষতা, চিকিৎসাকার্যে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা এসব অভিযোগই এতদিন শুনেছি। যেহেতু এটা নতুন কনসেপ্ট তাই নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এত বিশ্বাস করে যে রোগী আসবে তার সঙ্গে যে এমন অসংলগ্ন ব্যবহার করতে পারে এটা আমাদের মাথাতেই ছিল না।’ সময় বা অবস্থার তাগিদেই সব করতে হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিএমডিসি যৌন হয়রানি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর