‘২ জুলাইয়ের পর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেশের কোথাও যেন না থাকে’
২৪ জুন ২০১৯ ১৮:০৬
ঢাকা: ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “নির্ধারিত ‘বিন’ ছাড়া ফার্মেসিগুলোর কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মজুদ করা যাবে না। আর ২ জুলাইয়ের পর দেশের কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যেন না থাকে।”
সোমবার (২৪ জুন) পুরান ঢাকার একটি কমিউনিটি হলে আয়োজিত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সঙ্গে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “পুরো দেশ জুড়ে ‘ডেট এক্সপায়ার্ড’ মেডিসিন সরাতে হবে এবং সেটা এক মাসের মধ্যেই করতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরানো, আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে বিসিডিএস’র পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয় অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স চালু, ড্রাগ লাইসেন্স মালিকানা পরিবর্তন, ফিজিসিয়ান স্যাম্পল উৎপাদন বন্ধ করা, লাইসেন্সবিহীন দোকারদারকে লাইসেন্স দেওয়া, রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ ও চিকিৎসকের ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রিপশনে লেখা বন্ধ করা, ওষুধের দোকানে পুলিশ, র্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর যখন অভিযান চালাবে তখন স্থানীয় ড্রাগ সুপার ও বিসিডিএর প্রতিনিধির উপস্থিত থাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। এছাড়া সমিতির প্রায় ৮০০ সদস্য, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
মত বিনিময় অনুষ্ঠানে মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ সেক্টরে কোনো বদল যদি করতে হয় তাহলে ওপর থেকে কেবল নির্দেশনা দিয়ে হবে না, মাঠে কাজ করতে হবে।’
‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত না নিলে কোম্পানিগুলোকে বর্জন করব’
ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটি ভিন্ন বাক্সে রাখতে হবে এবং সেখানে লাল কালিতে লেখা থাকতে হবে, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, বিক্রয়ের জন্য নহে’। কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সেটা পাননি। তাহলে কি সে কাজ আমাদের সঠিক হয়েছে বলে বিসিডিসির সদস্যদের প্রশ্ন করেন মহাপরিচালক।
সেসব ওষুধ বিক্রি হয়েছে কি হয়নি সেটা পরের কথা মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, ‘সব মানুষ যে মেয়াদের তারিখ দেখে নেবেন সেরকম নয়, আবার সবাই অপরাধপ্রবণ নয়, সেটাও না। কেউ কেউ ইনটেনশনালিও দিতে পারে। যদিও এর সংখ্যা খুবই কম হবে মনে করি। দুই বছর আগে ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেরকম ওষুধও অভিযানে পাওয়া গেছে। অথচ মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার ছয়মাস আগে থেকে ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা তার আগেই সে ওষুধ রিপ্লেস করতে হবে।’
এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের বিভাগ এবং জেলাগুলোতে অধিদফতর থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও জানান মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমদ বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি নিয়ে কোনো ব্যবসা করা যাবে না। জনগণের সুস্বাস্থ্যের জন্য যা যা করতে হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাই করা হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ফার্মেসিগুলোতে তাদের অভিযানের তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘গত এক বছরে ঢাকা সিটিতে ২৫২টি ফার্মেসিতে ৯৩ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে এ চিত্র কত ভয়াবহ। এ ২৫২টি ফামের্সির নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা যায়।’ এই ২৫২ ফার্মেসির সমস্ত তথ্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে দাখিল করবেন বলেও জানান মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।
এর আগে, গতকাল ২৩ জুন ঔষধ প্রসাশন অধিদফতরে আয়োজিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২ জুলাইয়ের ভেতরে দেশের বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত পদ্ধতিতে সেসব ওষুধ ধ্বংস করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে প্রতিবেদন আকারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন এক মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: কোম্পানিগুলোই ধ্বংস করবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, বৈঠকে সিদ্ধান্ত
সারাবাংলা/জেএ/এমও